ভারতের কাছে সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। স্বল্প দূরত্ব থেকে অর্ধেক বিশ্বে হামলা চালাতে পারে এমন ক্ষেপণাস্ত্র। স্থলে বা আকাশে শত্রুর হুঁশ উড়িয়ে দেওয়ার জন্য ল্যান্ড-টু-এয়ার বা এয়ার-টু-ওয়াটার বা আন্ডারওয়াটার মিসাইলও রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির শক্তি তাদের গতি, পরিসীমা এবং অস্ত্র বহন ক্ষমতা দ্বারা বোঝা হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের কতগুলি ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে... (ছবি: উইকিপিডিয়া)
পৃথ্বী মিসাইল (Prithvi Missiles): ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিনটি রূপ রয়েছে। এক থেকে তিন পর্যন্ত, তিনটিই পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। পৃথ্বী একটি সারফেস টু সারফেস ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইল। এর রেঞ্জ ১৫০ কিমি। পৃথ্বী-২ একটি সারফেস-টু-সার্ফেস শর্ট রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল (SRBM)। এর রেঞ্জ ২৫০ থেকে৩৫০ কিমি। পৃথ্বী-৩ একটি সারফেস থেকে সারফেস স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল। এর রেঞ্জ ৩৫০ থেকে ৭৫০ কিমি। তিনটিই ইন্টিগ্রেটেড মিসাইল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অধীনে নির্মিত হয়েছে। তিনটেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত। তিনটি ক্ষেপণাস্ত্রই ৫০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজি ওজনের পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। (ছবি: এএফপি)
ধনুশ মিসাইল (Dhanush Missiles): ধনুশ মিসাইল আসলে পৃথ্বী-৩ এর নৌ সংস্করণ। এটি ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বারা সারফেস-টু-সার্ফেস বা জাহাজ থেকে জাহাজে আঘাত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ধনুশ প্রচলিত বা পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। এটি ৩৫০ কিলোমিটার রেঞ্জে ১০০০ কেজি ওজনের একটি অস্ত্র, ৬০০ কিলোমিটার রেঞ্জে ৫০০ কেজি এবং ৭৫০ কিলোমিটার রেঞ্জে ২৫০ কেজি ওজনের অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। প্রচলিত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ব্লাস্ট, ফ্র্যাগমেন্টেশন, থার্মোবারিক অস্ত্র, যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
অগ্নি মিসাইল (Agni Missiles): ভারতীয় সেনাবাহিনীর আরেকটি বিপজ্জনক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার সাত বা ছয়টি রূপ রয়েছে। সপ্তম প্রস্তুত হচ্ছে। এই সমস্ত রূপগুলি প্রচলিত বা পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। রেঞ্জ অনুযায়ী অস্ত্রের ওজন বাড়ানো বা কমানো যায়। অগ্নি-১ একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (MRBM)। এর রেঞ্জ ৯০০ থেকে ১২০০ কিমি। অগ্নি-পি হল একটি এমআরবিএম (MRBM) যার রেঞ্জ ১০০০ থেকে ২০০০ কিমি। এটি এখন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
অগ্নি-২ও এই শ্রেণীর একটি ক্ষেপণাস্ত্র, তবে এর পাল্লা ২০০০ থেকে ৩৫০০ কিমি। অগ্নি-৩ একটি মধ্যবর্তী রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল (IRBM)। এর রেঞ্জ ৩৫০০ থেকে ৫০০০কিমি। অগ্নি-৪ও এই শ্রেণীর একটি ক্ষেপণাস্ত্র। এর রেঞ্জ ৪০০০ কিমি। অগ্নি-৫ একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM), যার সীমা ৫৫০০ কিমি। অগ্নি-৬ বিকশিত হচ্ছে। এটি ICBMও হবে। এর রেঞ্জ হবে ১২ থেকে ১৬ হাজার কিলোমিটার। অগ্নি-পি এবং অগ্নি-৬ ছাড়া সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্রই পরিষেবাতে রয়েছে। (ছবি: ডিআরডিও)
শৌর্য মিসাইল (Shaurya Missile): এটি একটি হাইপারসনিক সারফেস থেকে সারফেস মাঝারি রেঞ্জের ব্যালিস্টিক মিসাইল। এটি প্রচলিত এবং পারমাণবিক অস্ত্র উভয়ই বহন করতে পারে। এটি ৫০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যেতে পারে। এর রেঞ্জ ৭০০ থেকে ১৯০০ কিমি। এর গতি ঘণ্টায় ৯,১৯০ কিলোমিটার। এটি ২০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের অস্ত্র বহন করতে পারে। (ছবি: ডিআরডিও)
কে-মিসাইল/সাগরিকা (K-Missile/Sagarika): K-15 এর দুটি রূপ অর্থাৎ সাগরিকা পরিষেবাতে রয়েছে এবং দুটি তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো সবই প্রচলিত ও পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। K-15 অর্থাৎ সাগরিকা ক্ষেপণাস্ত্র হল একটি স্বল্প-পাল্লার সাবমেরিন-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল (SR-SLBM)। এর রেঞ্জ ৭৫০ কিমি। এটি প্রতি ঘন্টায় ৯২৬০ কিলোমিটার বেগে শত্রুর দিকে এগিয়ে যায়। শত্রুও পালানোর সুযোগ পায় না।
ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র (BrahMos Missiles): ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের দ্রুততম উড়ন্ত সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। ভারতে তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রের সাতটি রূপ রয়েছে। এটি প্রচলিত এবং পারমাণবিক উভয় অস্ত্র দিয়ে শত্রুকে আক্রমণ করতে পারে। সবগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৭০৪ কিলোমিটার। তাদের পরিসীমা ২৯০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় সেনা, বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীতে কাজ করছে। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র ব্রহ্মোস এনজি এবং ব্রহ্মোস-২ তৈরি করা হচ্ছে। ব্রহ্মোস-২ একটি হাইপারসনিক মিসাইল হবে যার রেঞ্জ ৬০০থেকে ১০০০ কিমি। এর গতি ঘণ্টায় ৯৮৭৮ কিলোমিটার হতে পারে। (ছবি: এএফপি)
নির্ভয় মিসাইল (Nirbhay Missile): দূরপাল্লার সব আবহাওয়ার সাবসনিক ক্রুজ মিসাইল। এটি ২০০ থেকে ৩০০ কেজি ওজনের প্রচলিত এবং পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে। এর গতি ঘণ্টায় ৮৬৪ থেকে ১১১১ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। এটি সারফেস-টু-সার্ফেস স্ট্রাইকের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর রেঞ্জ ১৫০০ কিমি পর্যন্ত। (ছবি: উইকিপিডিয়া)
সূর্য মিসাইল (Surya Missile): এই সারফেস টু সারফেস মিসাইল তৈরির কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কোথাও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এটি হবে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। যার রেঞ্জ হতে পারে ১৬ হাজার কিলোমিটার। বলা হচ্ছে এর গতি হবে ঘণ্টায় ৩৩,১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সরকার বা ডিআরডিওর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করা হয়নি।
NASM-SR Anti Ship Missile: এটি হবে একটি নৌ এন্টি শিপ মিসাইল। বানানোর খবর আছে কিন্তু নিশ্চিত কিছু নেই। এটি হেলিকপ্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি ১০০ কেজি ওজনের অস্ত্র বহন করতে পারে। তবে প্রচলিত না পারমাণবিক অস্ত্র তা স্পষ্ট নয়। অপারেশনাল রেঞ্জ ৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার বলে মনে করা হচ্ছে। গতিবেগও হবে ঘণ্টায় ১০০০ কিলোমিটারের কম।