বিহার বিধানসভা নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী প্রসাদ যাদব। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি লালু প্রসাদ যাদব-পুত্র। রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা তেজস্বী এ বছরের নির্বাচনে নীতিশ কুমারের বিরোধী শিবিরকে ইতিমধ্যেই কঠিন লড়াইয়ের মুখে রেখেছেন। বুথ ফেরত সমীক্ষায় এগিয়ে লালু পুত্রই।
রাজনীতিকের পাশাপাশি ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর বিহারের গোপালগঞ্জের ভূমিপুত্র একাধারে দক্ষ ক্রিকেট খেলোয়ারও। ২০০৯ সালে ঝাড়খণ্ডের হয়ে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলেন তিনি। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১২ অবধি আইপিএল এ দিল্লি ডেয়ারডেভিলস দলে ছিলেন তেজস্বী। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি, বিজয় হাজারে ট্রফিও খেলেছেন ডান হাতি অলরাউন্ডার। এমন প্লেয়ার যে রাজনৈতিক মঞ্চেও পারফরম্যান্স দেখাতে ছাড়বেন না তা বলাই বাহুল্য।
রাবড়ি দেবী এবং লালু প্রসাদ যাদবের কনিষ্ট পুত্র তেজস্বী ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত উপমুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্ব সামলেছিলেন। বিহারের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সি উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৫ সালে রাঘোপুর বিধানসভা এলাকা থেকে বিধায়ক হন তেজস্বী প্রতাপ।
পড়াশুনোর সূত্রপাত পাটনায় হলেও পরবর্তীতে রাজধানীতে গিয়ে দিল্লি পাবলিক স্কুলে পড়াশুনো করেন। শিক্ষকদের প্রিয় এই ছাত্র ছিলেন স্বভাবে লাজুক। কিন্তু স্কুল জীবন থেকেই ক্রিকেট পাগল। পরবর্তীতে স্কুলের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেনের দায়িত্বও সামলেছেন তেজস্বী প্রতাপ যাদব।
রাজনীতিক লালুর ছোট ছেলে তেজস্বীর ধ্যানজ্ঞান ছিল ক্রিকেট। দিল্লির অনূর্ধ্ব-ফিফটিন দলে সুযোগ পান, সেই দলে ছিলেন বিরাট কোহলিও। পরবর্তীতে দিল্লির অনূর্ধ্ব-সেভেন্টিন এবং অনূর্ধ্ব-নাইন্টিন দলের হয়ে খেলেন তিনি। রাজনৈতিক ময়দান নয়, ২২ গজের ক্রিকেট পিচে সাবলীল ছিলেন তেজস্বী প্রতাপ।
২০০৮ সালের একটি ঘটনায় পরই প্রকাশ্যে আসে তেজস্বী এবং তাঁর দাদা তেজ প্রতাপ যাদব। দুজনের উপরই হামলা হয় এমন অভিযোগ ওঠে এবং আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় দুই ভাইকে। সে বছরই বিশ্বকাপজয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্ট্যান্ডবাই দলে নাম ছিল তেজস্বীর। ২০১০ সালে ক্রিকেট মাঠের পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের হয়ে নামেন তেজস্বী প্রতাপ। দলের রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি তৈরি থেকে ডিজিটাল প্রচার সবটাই সাফল্যর সঙ্গেই সামলেছিলেন লালু-পুত্র। তেজস্বীর কথাতেই ২০১৪ সালের নির্বাচনে নীতিশ কুমার এবং তাঁর জনতা দলের সঙ্গে জোট বাঁধেন লালু।
২০১৫ সালে মহাগঠবন্ধনের সদস্য হিসেবে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন তেজস্বী প্রতাপ। প্রবল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে এই জোট। উপমুখ্যমন্ত্রী পদে জায়গা করে নেন তেজস্বী। নীতিশ কুমারের মন্ত্রীসভায় পরিবেশ ও বনদফতরের দায়িত্বও পান তিনি। ২০১৭ সালে আইআরসিটিসি ২০০৪ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়ে লালু এবং তাঁর পরিবারের। সিবিআইইয়ের দায়ের করা মামলায় নাম থেকে তেজস্বীরও। সেই সময়ই জোট ভাঙেন নীতিশ। হাত মেলান বিজেপির সঙ্গে। উপমুখ্যমন্ত্রী থেকে বিরোধী দলের নেতা হয়ে ওঠেন তেজস্বী।