ভারত ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের জন্য সামরিক শক্তি এবং নারী শক্তির দুর্দান্ত প্রদর্শনের সঙ্গে প্রস্তুত। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু শুক্রবার কর্তব্য পথে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি দুর্দান্ত প্রদর্শনের সঙ্গে ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন। দেশের নারী শক্তি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তুলে ধরার বিস্তৃত প্রতিপাদ্য নিয়ে এই জমকালো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। প্রথমবারের মতো, তিনটি বাহিনীর নারীরা অংশগ্রহণ করবেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম যেমন ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন জ্যামার, নজরদারি ব্যবস্থা, যানবাহন-মাউন্টেড মর্টার এবং BMP-II পদাতিক যুদ্ধের যানগুলি প্রদর্শন করবে।
প্যারেড
প্রথমবারের মতো, সেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনার মহিলাদের একটি কন্টিনজেন্ট দেশের বৃহত্তম ইভেন্টের অংশ হবে। লেফটেন্যান্ট দীপ্তি রানা এবং প্রিয়াঙ্কা সেবাদা ১০ জন মহিলা অফিসারের মধ্যে রয়েছেন, যারা প্যারেডে স্বাতী অস্ত্র শনাক্তকরণ রাডার এবং পিনাক রকেট সিস্টেমের নেতৃত্ব দেবেন। এটিও একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে।
মিলিটারি ব্যান্ড দিয়ে কুচকাওয়াজ শুরু হবে না
প্রথাগত মিলিটারি ব্যান্ডের পরিবর্তে প্রথমবারের মতো শঙ্খ, নদস্বরম, নাগারা-র মতো ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কুচকাওয়াজ শুরু হবে। ভারতীয় বায়ুসেনার ফ্লাই-পাস্টের সময়, প্রায় ১৫ জন মহিলা পাইলটও 'নারী শক্তি' প্রতিনিধিত্বকারী দর্শকদের মুগ্ধ করবেন। সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সের (সিএপিএফ) কন্টিনজেন্টে শুধুমাত্র মহিলা কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে এবং প্রায় ৯০ মিনিট ধরে চলবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছবেন। তার কয়েক মিনিট পরেই আসবেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু এবং ফরাসি প্রেসিজেন্ট ম্যাক্রোঁ।
৬ জন ভারতীয় ফরাসি মার্চিং কন্টিনজেন্টের অংশ হবেন
জাতীয় সংগীতের পর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং দেশীয় বন্দুক ব্যবস্থা ১০৫ মিমি ভারতীয় ফিল্ড গান দিয়ে ২১ বন্দুকের স্যালুট দেওয়া হবে। ১০৫ হেলিকপ্টার ইউনিটের চারটি MI-17 IV হেলিকপ্টার উপস্থিত দর্শকদের উপর ফুল বর্ষণ করবে। এরপর 'আবাহন' নামে একটি ব্যান্ড পারফর্ম করবে। যেখানে শতাধিক নারী শিল্পী বিভিন্ন ধরনের তাল বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে অংশ নেবেন। এরপর রাষ্ট্রপতির সালাম গ্রহণের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ শুরু হবে। প্যারেডের নেতৃত্ব দেবেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভবনেশ কুমার।
ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত ব্যান্ড এবং মার্চিং স্কোয়াডের মার্চ পাস্টের সাক্ষী থাকবেন অতিথিরা। ৩০ সদস্যের ব্যান্ড দলটির নেতৃত্বে থাকবেন ক্যাপ্টেন খোর্দা এবং তার পরে ফ্রান্স থেকে ৯০ সদস্যের মার্চিং কন্টিনজেন্ট আসবে। ৬ ভারতীয় ফরাসি মার্চিং কন্টিনজেন্টের অংশ হবে। স্যালুটিং প্ল্যাটফর্ম থেকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফরাসি এয়ার অ্যান্ড স্পেস ফোর্সের একটি মাল্টি-রোল ট্যাঙ্কার পরিবহন বিমান এবং দুটি রাফাল যুদ্ধবিমান দিয়ে উড়ে যাবে। যান্ত্রিক কলামের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রথম ভারতীয় সেনা দলটি হবে ৬১ অশ্বারোহী বাহিনী, যার নেতৃত্বে থাকবেন মেজর যশদীপ আহলাওয়াত। এরপর ১১টি যান্ত্রিক কলাম, ১২টি মার্চিং কন্টিনজেন্ট এবং আর্মি এভিয়েশন কর্পসের উন্নত হালকা হেলিকপ্টার দ্বারা ফ্লাই পাস্ট করা হবে।
ট্যাঙ্ক টি-৯০ ভীষ্ম, এনএজি মিসাইল সিস্টেম, অল-টেরেন ভেহিকল, অস্ত্র শনাক্তকরণ রাডার সিস্টেম 'স্বাতী', ড্রোন জ্যামার সিস্টেম এবং যান্ত্রিক কলাম দ্বারা মাঝারি রেঞ্জের সারফেস থেকে এয়ার মিসাইল। ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF) কন্টিনজেন্টে ১৪৪ জন এয়ারম্যান এবং ৪ জন অফিসার থাকবেন এবং স্কোয়াড্রন লিডার রশ্মি ঠাকুর নেতৃত্বে থাকবেন। কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের পিছনে অতিরিক্ত অফিসার হিসাবে স্কোয়াড্রন লিডার সুমিতা যাদব, প্রতিথি আহলুওয়ালিয়া এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কীর্তি রোহিল মার্চ পাস্ট করবেন। ভারতীয় বায়ুসেনার ৪৬টি বিমানের ফ্লাইপাস্টের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে। বিমান বাহিনীর বহরে থাকবে ২৯টি যুদ্ধবিমান, ৭টি পরিবহন বিমান, ৯টি হেলিকপ্টার এবং ১টি হেরিটেজ বিমান। এই সমস্ত বিমান ৬টি ভিন্ন ঘাঁটি থেকে কাজ করবে। প্রথমবারের মতো দেশে তৈরি ৪টি তেজস বিমান ফ্লাইপাস্ট করবে। এর আগে একটি তেজস জেট প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তবে প্রথমবারের মতো একটি ফর্মেশনে উড়বে বিমানগুলো।
কর্তব্য পথে নারী শক্তির প্রদর্শন
CRPF, BSF এবং SSB-এর ২৬০ জনেরও বেশি মহিলা কর্মী মোটরসাইকেল প্রদর্শনের সময় সাহসী স্টান্ট করে দেশের 'নারী শক্তি' প্রদর্শন করবেন। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মোট ১৬টি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও বিভাগগুলির ৯টি ট্যাবলো কুচকাওয়াজের সময় কর্তব্য পথে দেখা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, মণিপুর, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, লাদাখ, তামিলনাড়ু, গুজরাত, মেঘালয়, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং তেলঙ্গনা।