২০১৯ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফাইটার পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ধরেছিল পাকিস্তান। তাঁকে প্রথমে না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু পাকিস্তানের দিকে ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র তাক করলে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে শুরু করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে মিসাইল মোতায়েন করা হয়েছিল। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পরিবেশ ছিল। ভারত মিসাইল তাক করতেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার সেনাবাহিনীর মত পাল্টে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ইমরান খান ক্রমাগত ফোন করছিলেন।
প্রাক্তন হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়া তাঁর নতুন বই অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট: দ্য ট্রাবলড ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনশিপস বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান' বইতে এই কথা জানিয়েছেন। অজয় তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ইমরান খান সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীও পরে সেই রাতকে 'হত্যার রাত' বলেছেন।
এটি ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনা যখন অভিনন্দন বর্তমান একটি পাকিস্তানি F-16 গুলি করে ধ্বংস করেছিলেন। কিন্তু এ সময় তাঁর জেট বিমানে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে আঘাত হানে। তিনি ইজেক্ট করেন ও পাকিস্তানের মাটিতে অবতরণ করেন।
মিসাইলের মুখ ঘুরিয়ে দিলে পাকিস্তান সরকার নড়েচড়ে বসে
পাকিস্তানি আর্মি অবিলম্বে অভিনন্দনকে গ্রেফতার করে। প্রথমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঔদ্ধত্য দেখালে সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও ভারত সরকার মিসাইলগুলো পাকিস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তাতেই পাকিস্তানের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই প্রস্তুতি দেখে নড়েচড়ে বসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সরকার।
অজয় বিসারিয়া জানান, বর্তমানকে গ্রেফতারের পর তিনি ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার সোহেল মেহমুদের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন যে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চান। বিসারিয়া দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তারপরে মেহমুদকে জানান যে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে পরবর্তী কয়েক ঘন্টা পাওয়া যাবে না। এরপর মেহমুদ আর বিসারিয়াকে ফোন করেননি।
ইমরান বলেছিলেন তিনি শান্তির জন্য বর্তমানকে ছেড়েছেন
২৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমানের মুক্তির ঘোষণা করার সময় ইমরান খান পাকিস্তানের সংসদে বলেছিলেন যে তিনি রাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। যাতে শান্তি ফিরে আসে। পাকিস্তান দেখাচ্ছিল যে তারা শান্তির জন্য বর্তমানকে ছাড়ছে। কিন্তু আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড জানত যে ভারতের হুমকি এবং ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়ে পাকিস্তান এটি করেছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিল ভারত।
পাকিস্তান কখনই সন্ত্রাসবাদী হামলায় তার ভূমিকা স্বীকার করে না
এই রাষ্ট্রদূতরা ভারতের বিদেশ সচিবকে জানিয়েছিলেন যে পাকিস্তান বর্তমান ছাড়তে রাজি নয়। ভারত আগে থেকেই জানত যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে তার ভূমিকা মেনে নেয় না। সেটা 9/11 হোক। অথবা 26/11 মুম্বই হামলা। পাঠানকোট হোক বা উরি হামলা। তাই কড়া বার্তা দিতে প্রস্তুত ছিল ভারত। তাই কৌশলের পাশাপাশি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে একটি নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে পাকিস্তান যদি বর্তমানকে ছেড়ে না দিত, তবে এটি একটি 'হত্যার রাত' হয়ে যেত। অজয় বিসারিয়ার বইতে বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও দেওয়া আছে।