আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনায় প্রাক্তন গুজরাট মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণির মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। রবিবার সকালে তাঁর ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা হয় এবং এরপর মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ২৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪১ জন ছিলেন বিমানের যাত্রী ও ক্রু এবং বাকি ২৯ জন মাটিতে উপস্থিত সাধারণ মানুষ।
ডিএনএ পরীক্ষায় চলছে পরিচয় নিশ্চিতকরণ
দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রীর মৃতদেহ আগুনে পুড়ে অশনাক্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে পরিচয় নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩২টি মৃতদেহ শনাক্ত হয়েছে এবং ১৪টি মৃতদেহ সংশ্লিষ্ট পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সিভিল সুপারিনটেনডেন্ট ডঃ রজনীশ প্যাটেল। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই গুজরাটের উদয়পুর, ভদোদরা, খেদা, মেহসানা, আরভাল্লি, আহমেদাবাদ এবং বোটাদ জেলার বাসিন্দা।
দুর্ঘটনার সময় কী ঘটেছিল?
বৃহস্পতিবার বিকেলে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি বিজে মেডিকেল কলেজের একটি আবাসিক হোস্টেলের উপর বিধ্বস্ত হয়। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের ওই বিমানটিতে ২৩০ জন যাত্রী, ১০ জন ক্রু এবং ২ জন পাইলট ছিলেন। বিজয় রূপাণি বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করছিলেন এবং মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডন যাচ্ছিলেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, ১১এ-তে বসে থাকা এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান এবং বর্তমানে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শন ও তদন্ত শুরু
দুর্ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং আহতদের সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB)। দুর্ঘটনার ২৮ ঘণ্টা পর বিমানটির ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।
বিমান সংস্থার উপর কড়া নজর
এই দুর্ঘটনার পর, বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে রবিবার থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত বোয়িং ৭৮৭-৮ ও ৭৮৭-৯ সিরিজের বিমানে বাড়তি নিরাপত্তা পরিদর্শন চালানো হবে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA) বিশেষভাবে জ্বালানি, ইঞ্জিন ও হাইড্রোলিক সিস্টেম পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে এবং এর রিপোর্ট চেয়েছে।
এই ঘটনাটি এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রথম মারাত্মক দুর্ঘটনা এবং ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।