আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে বিমান ভেঙে ঢুকে পড়ে, সেই ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করবেন তিনি। কথা বলবেন তদন্তকারীদের সঙ্গেও। একইসঙ্গে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের একমাত্র জীবিত ব্যক্তির সঙ্গেও দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী। মাথা নীচু করে, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাঁকে দেখা গেল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে। রুমাল দিয়ে চোখ মুছতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাঁর সঙ্গেই এলাকা পরিদর্শন করেন এয়ার ইন্ডিয়ার শীর্ষকর্তা এবং অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রীও।
১২ জুন, দুপুর ১টা ৩৮ মিনিট। আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডার AI171 (Boeing 787-8, VT-ANB) বিমানটি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখের পলকেই ভস্মূীভূত হয়ে যান ২৪১ জন যাত্রী। ছোট একটি যান্ত্রিক ত্রুটি যাকে কনফিগারেশন এরর বলা হচ্ছে, সেটি কীভাবে এত বড় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হল? অথচ বিমানটির দুই পাইলট, ক্যাপ্টেন সুমীত সভরওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর, দু'জনেই যথেষ্ট অভিজ্ঞ ছিলেন। পরিষ্কার ছিল আকাশও। তাপমাত্রাও (৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) উড়ানের অনুকূল ছিল।
কী এই কনফিগারেশন এরর?
কনফিগারেশন এরর হল টেক অফের সময়কার এমন এক যান্ত্রিক ত্রুটি যা উড়ানে সমস্যা তৈরি করে। ফ্ল্যাপসের ভুল সেটিং, কম থ্রাস্ট, সময়ের আগে টেক অফ (রোটেশন) যা লোডিং গিয়ার না ওঠানোর মতো ভুলগুলিকেই কনফিগারেশন এরর বলা হয়। এই সমস্ত ছোট ছোট বিষয়েই উড়ান এবং উচ্চতায় ওঠান ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলে। এর একটিতেও সামান্য ভুলের জেরে উড়ান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে।
ঘটনাপ্রবাহ
বিমান: Boeing 787-8 ড্রিমলাইনার। একটি অত্যাধুনিক, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা বিমান। যেটিতে ছিল GE GEnx ইঞ্জিন।
উড়ান: আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন যাচ্ছিল বউড়ানটি। যা প্রায় ৪২০০ কিলোমিটার আকাশপথ। বিমানের ইঞ্জিন সম্পূর্ণ ভর্তি ছিল।
পরিস্থিতি: আবহাওয়া অনুকূল ছিল, তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮০ ফুট উচ্চতায় উড়ছিল ফ্লাইট। গরমের জন্যও হাওয়াও হাল্কা ছিল।
কী ঘটেছিল?
টেক অফের ৫ থেকে ৯ মিনিট পর মেঘানিনগরে বিমান ভেঙে পড়ে। মাত্র ৮২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছতে পেরেছিল সেটি। গতিবেগ ছিল ৩২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। বোয়িং বিমানের গতি আরও কম হওয়ার কথা। এছাড়াও ছবিতে দেখা গিয়েছে বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ার নীচের দিকে ছিল। যা হওয়া উচিত নয়।
কেন কনফিগারেশন এরর এত গুরুত্বপূর্ণ?
টেক অফ উড়ানের সবথেকে জরুরি পর্ব। ফ্ল্যাপস সঠিক ভাবে থাকা, থ্রাস্ট এবং রোটেশন স্পিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সম্ভাব্য ত্রুটি: ফ্ল্যাপস কম থাকলে উড়ান সঠিক ভাবে সম্ভব হয় না। আবার বেশি হলে উপরে উঠতে সমস্যা হয়। আহমেদাবাদের মতো শহরে সেটিংস যা হওয়া উচিত ছিল, তা কী অবস্থায় রয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। ক্রসচেক করা সম্ভব হয়েছিল কি না, ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সঠিক ছিল কি না, কোনও কারণে পাইলটরা ক্লান্ত ছিলেন কি না এবং দ্রুত উড়ানের চাপ ছিল কি না এবং সর্বোপরি রোটেশন
ঠিকমতো হয়েছে কি না, এই সব বিষয়গুলিই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণে নির্ধারণে বিশেষ জরুরি। খোঁজ চালানো হচ্ছে বিমানের ব্ল্যাক বক্সের। ১ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সেটি উদ্ধার হলেই ঠিক কী ঘটেছিল দুর্ঘটনার মুহূর্তে তা জানা যাবে।