দিল্লিতে বায়ুদূষণের জেরে জেরবার এক যুবক সান্তা ক্লজের পোশাকেও দূষণ ঠেকাতে মাস্ক পরেছেন (ছবি PTI)COVID-19 মহামারির পর দেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে উঠে আসতে পারে ফুসফুসের রোগ!সম্প্রতি এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন ব্রিটেনে কর্মরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুসফুস ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।
লিভারপুলের পালমোনোলজিস্ট ডাঃ মনীশ গৌতম জানাচ্ছেন, বিষাক্ত বাতাস বহু বছর ধরে উত্তর ভারতে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের ফুসফুসের ক্ষতি করছে। কিন্তু হাসপাতালে আসা রোগীর বর্তমান সংখ্যা এখন হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আরও অনেকের রোগ এখনও নির্ণয় করা হয়নি। তিনি জানাচ্ছেন, অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, প্রতি বছর এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, উত্তর ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করে জানাচ্ছেন, ফুসফুসের রোগে বড় সুনামি আসন্ন।
চিকিৎসক মণীশ গৌতম এই পরিস্থিতি রোধে সরকারের কাছে আর্জিও জানিয়েছেন। তিনি জানান, এক্ষেত্রে সরকারের উচিত একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা, যেটি ফুসফুসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। তিনি বলেন, যেভাবে টিবি বা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃহৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, ফুসফুসের ক্ষেত্রেও এমনই কর্মসূচি নিতে হবে।
বায়ুদূষণের জেরে ফুসফুসের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে
পরিসংখ্যান বলছে ডিসেম্বর মাসেই দিল্লিতে ফুসফুসের রোগীর সংখ্যা সম্প্রতি ২০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, এর মধ্যে অনেক যুবক ও প্রথমবার অসুস্থ হচ্ছেন এমন রোগীও রয়েছেন। চিকিৎসেরা জানাচ্ছেন, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, হালকা কাশি, গলা ব্যথা, শুষ্ক চোখ, ত্বকে ফুসকুড়ি এবং ঘন ঘন সংক্রমণের মতো লক্ষণগুলিকে প্রায়শই ছোটখাটো বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়, তবে এগুলি গুরুতর অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
দূষণের ফলে হৃদরোগও বাড়ছে!
লন্ডনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাজয় নারায়ণ জানান, গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ বৃদ্ধির প্রধান কারণ শুধুমাত্র স্থূলতা নয় বরং বায়ু দূষণও। বার্মিংহামের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেরেক কনোলি ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, বায়ুদূষণের ফলে হৃদরোগ খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। দূষণের ক্ষুদ্র কণা (PM2.5) অদৃশ্য, তাই মানুষ বিপদটা বুঝতে পারে না। গাড়ি, বিমান এবং অন্য যানবাহন থেকে এই ক্ষুদ্র কণা বেরিয়ে মানুষের ক্ষতি করে।
খোদ কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকরি মঙ্গলবার স্বীকার করেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতার কারণে দিল্লির দূষণের প্রায় ৪০ শতাংশ হয় পরিবহন খাতের কারণে। যার জেরে তিনি জৈব জ্বালানির মতো অপশন দ্রুত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
এমনকি সংসদের শেষ শীতকালীন অধিবেশনেও কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে, বায়ুর AQI নিম্নমানের সঙ্গে ফুসফুসের রোগের সরাসরি কোনও যোগসূত্রের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও বায়ু দূষণ শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার একটি কারণ। গত ৩ বছরে, দিল্লিতে তীব্র শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত ২ কেস সামনে এসেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার জনকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়েছিল। চিকিৎসকরা দাবি করছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট নয়। প্রাথমিক সনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং সচেতনতার দিকে সকলের সমান মনোযোগ দিতে হবে।