আমেরিকান F-35 নাকি রাশিয়ান SU-57, ভারতের জন্য কোন স্টিলথ ফাইটার জেট ভাল?

ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব আর কে সিং শনিবার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভারত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার বিকল্পটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। তিনি বলেছেন যে 'বন্ধু দেশগুলির' কাছ থেকে এই ধরনের বিমান কেনা হতে পারে।

Advertisement
আমেরিকান F-35 নাকি রাশিয়ান SU-57, ভারতের জন্য কোন স্টিলথ ফাইটার জেট ভাল?আমেরিকান F-35 নাকি রাশিয়ান SU-57, ভারতের জন্য কোন স্টিলথ ফাইটার জেট ভাল?
হাইলাইটস
  • SU-57 স্টিলথ ফাইটার জেটকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ফাইটার জেটগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়
  • ভারত পূর্বে এই জেটের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল

চিনের কাছ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান খুব শীঘ্রই পেতে চলেছে পাকিস্তান, এমনই খবর রয়েছে। সেক্ষেত্রে  উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য কিছুটা হলেও এদিক ওদিক হবে। কারণ, ভারতের হাতে কোনও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নেই। পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হল স্টিলথ প্রযুক্তি-সহ যুদ্ধবিমান। এছাড়াও, এতে থাকে সবচেয়ে আধুনিক সমস্ত ফিচার। এই ধরনের যুদ্ধবিমানকে রাডারে চিহ্নিত করা খুব কঠিন কাজ।

ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব আর কে সিং শনিবার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভারত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনার বিকল্পটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। তিনি বলেছেন যে 'বন্ধু দেশগুলির' কাছ থেকে এই ধরনের বিমান কেনা হতে পারে। প্রতিরক্ষা সচিবের এই বিবৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতও নিজস্ব স্বদেশী AMCA (অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট) পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরি করছে। তবে এটি তৈরি এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে। যদিও তিনি কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেননি, আমেরিকা ভারতকে F-35 এবং রাশিয়া SU-57 পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান অফার করেছে।

রাশিয়া ক্রমাগত তার পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট Su-57 এর শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা এবং সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। আমেরিকার F-35 ফাইটার জেটও এই দৌড়ে জড়িত। এটি একটি শক্তিশালী ফাইটার জেট, তবে ভারতের জন্য এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে দুটির মধ্যে কোনটি তার জন্য ভাল?

রাশিয়ার SU-57 স্টিলথ ফাইটার জেটকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ফাইটার জেটগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। Su-57 হল একটি টুইন-ইঞ্জিন মাল্টি-রোল স্টিলথ জেট, যা সুপারসনিক গতি, উন্নত এভিওনিক্স এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ক্ষমতা সম্পন্ন। ভারত পূর্বে এই জেটের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল, কিন্তু কিছু প্রযুক্তিগত এবং অংশীদারিত্বের বিরোধের কারণে আলোচনা এগিয়ে যেতে পারেনি।

শুধুমাত্র বিমান কেনা হবে? নাকি প্রযুক্তি হস্তান্তরের আওতায় ভারতে উৎপাদন হবে?

Advertisement

যদি দেশেই এই ধরনের বিমান উৎপাদন হয়, তাহলে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পটি উৎসাহিত হবে। এর সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগও পাবে। এর ফলে আমেরিকা বা রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

গতি

Su-57 এই ক্ষেত্রে আমেরিকান ফাইটার জেটের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এটি ২৬০০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে উড়ে। যেখানে F-35 এর সর্বোচ্চ গতি মাত্র ১৯০০ কিলোমিটার।

অস্ত্র

Su-57 এবং F-35 উভয়েরই ১২টি হার্ডপয়েন্ট রয়েছে। এর মানে হল ভেতরে ৬টি এবং বাইরে ৬টি। দুটি বিমানই বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে। তবে রাশিয়ান ফাইটার জেট এই ক্ষেত্রেও F-35 এর চেয়ে এগিয়ে। এটি অনেক স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘ পাল্লার এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল, গাইডেড এরিয়াল বোমা বহন করতে পারে। যেখানে F-35 কম এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বা বোমা বহন করতে পারে।

দীর্ঘ দূরত্বে আক্রমণ করার ক্ষমতা

Su-57 এ লাগানো R-37M মিসাইল রাশিয়ার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি অস্ত্র। এই অস্ত্র F-35 এর দ্বিগুণ দূরত্বে আক্রমণ করে। ইউক্রেন যুদ্ধে  রাশিয়া এটি প্রচুর ব্যবহার করেছে।

স্টিলথ এবং কর্মক্ষমতা

Su-57 এর স্টিলথ সিস্টেম গতি না কমিয়েই কাজ করে। এটি যুদ্ধে এবং পালানোর ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়। F-35-এর ফোকাস স্টিলথ প্রযুক্তির উপর, যা শুধুমাত্র ল্যান্ড অ্যাটাকে ব্যবহৃত হয়। ডগ ফাইটের ক্ষেত্রে এর শক্তি সীমিত হয়ে যায়। F-35 আসলে ল্য়ান্ড অ্যাটাক মিশনের জন্য তৈরি। এটি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, গুপ্তচরবৃত্তি, নজরদারির মতো মিশনও চালাতে পারে। যেখানে রাশিয়ান যুদ্ধবিমান একটি বহুমুখী যুদ্ধবিমান। এটি অনেক ধরনের অপারেশন চালাতে পারে। আকাশে ডগ ফাইট থেকে শুরু করে স্ট্রাইক মিশন পর্যন্ত।

রেঞ্জ

F-35-এর কমব্যাট রেঞ্জ ১২৩৯ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত যেতে পারে। Su-57-এর কমব্যাট রেঞ্জ ১২৫০ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ৬৬ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত যেতে পারে। Su-57 এবং F-35 উভয়ই সুপারসনিক। কিন্তু F-35-এর সুপারক্রুজের একটি সীমা রয়েছে। কারণ হল এর এয়ারফ্রেম। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য একই গতিতে উড়তে পারে না।

অনেক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে ভারতের বায়ুসেনার হাতে AMCA না আসা হওয়া পর্যন্ত শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অল্প পরিমাণে কোনও দেশ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনা উচিত। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়ার Su-57। বিশেষ করে যদি রাশিয়া তার প্রযুক্তি হস্তান্তর বা 'মেক ইন ইন্ডিয়া' নীতিতে নমনীয়তা দেখায়। রাশিয়া SU-57 যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি ভারতে হস্তান্তরের পাশাপাশি সোর্স কোড হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়া ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছে যে ভারত যদি SU-57 কেনে, তাহলে তারা ভারতের AMCA প্রোগ্রামে প্রযুক্তিগত সহায়তা করবে।

তবে, বিপরীত মতও রয়েছে। অনেক প্রাক্তন বায়ুসেনা আধিকারিক মনে করেন যে কোনও দেশ থেকেই ভারতের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনা উচিত নয়। বরং AMCA (অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট) যাতে তাড়াতাড়ি বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়া যায় তার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ গত ২৭ মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) প্রোগ্রামের জন্য বিশেষ অনুমোদন দিয়েছেন। এই প্রোগ্রামে অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ADA) অন্য সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মেলাতে পারে। সরকারি এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলি সমান সুযোগ পাবে। এছাড়াও পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য একযোগে কাজ করছে জাপান, ব্রিটেন এবং ইতালি। জানা গিয়েছে, এই গ্লোবাল কমব্যাট এয়ার প্রোগ্রাম (GCAP) -এ যোগ দেওয়ার জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে জাপান।

AMCA প্রকল্পের গতি আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন প্রবীর পুরোহিত (অবসরপ্রাপ্ত)। তিনি এটাও জানিয়েছেন যে এখনই অন্য কোনও দেশ থেকে ভারতের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনা জরুরি নয়। বরং AMCA প্রকল্পের কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে পঞ্চম প্রজন্মের বিমানের দাম ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচের বিষয়টা রয়েছে।

Advertisement

POST A COMMENT
Advertisement