মডেলিং দুনিয়া, নিষিদ্ধ প্রেম এবং ঠান্ডা মাথায় খুন—এই তিনের মোড়কে জড়ানো এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের সাজা দিল দিল্লি আদালত। ২০১৮ সালের অক্টোবরে স্কুল শিক্ষিকা সুনীতা শেহরাওয়াতকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মডেল অ্যাঞ্জেল গুপ্তা ও তার প্রেমিক মনজিত শেহরাওয়াতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, এটি ছিল একটি 'সুপরিকল্পিত, নিষ্ঠুর এবং নির্ভুলভাবে সম্পাদিত অপরাধ।'
খুনের পেছনে ছিল প্রেম ও প্রতিশোধের ভয়াল ছায়া
সুনীতা ছিলেন হরিয়ানার সোনিপতের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ২৯ অক্টোবর ২০১৮, যেদিন তাকে শিক্ষাগত অবদানের জন্য সংবর্ধিত করা হওয়ার কথা ছিল, ঠিক সেদিনই বাওয়ানায় তিন রাউন্ড গুলিতে নিঃশেষ হয়ে যায় তার জীবন। স্কুলে যাওয়ার পথে খুব কাছ থেকে গুলি চালায় ভাড়াটে খুনিরা।
প্রেম, প্রতারণা ও পরিকল্পিত হত্যার গল্প
মডেল অ্যাঞ্জেল গুপ্তার সঙ্গে মনজিত শেহরাওয়াতের সম্পর্ক শুরু হয় ২০১৬ সালে। দু’জনের পরিবারই সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তারা তা অগ্রাহ্য করে একে-অপরের প্রতি অন্ধভাবে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে অ্যাঞ্জেল মনজিতকে অনুরোধ করেন কারোয়া চৌথ তার সঙ্গে পালন করার জন্য, কিন্তু সুনীতার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে মনজিত তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর থেকেই জন্ম নেয় ঘৃণা, শুরু হয় হত্যার পরিকল্পনা।
তদন্তে নেমে কীভাবে উঠে আসে ষড়যন্ত্র?
প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করলেও, উদ্ধার হয় সুনীতার ডায়েরি—যেখানে ছিল স্বামীর বিশ্বাসভঙ্গের অসংখ্য প্রমাণ ও জীবনশঙ্কার বর্ণনা। তদন্তে প্রকাশ পায়, খুনের আগে এবং পরে অ্যাঞ্জেল ও মনজিতের ঘন ঘন ফোন যোগাযোগ ছিল। এমনকি মনজিত একটি অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকায় ঠিকাদার রাজীব ওরফে জনিকে খুনের বরাত দেন—যা তদন্তে বড় ভুল প্রমাণ হয়।
আদালতের রায় এবং মন্তব্য
দিল্লির রোহিণী আদালত মনজিত, অ্যাঞ্জেল সহ মোট ছয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। যারা দণ্ডিত হয়েছেন:
মনজিত শেহরাওয়াত (স্বামী),
অ্যাঞ্জেল গুপ্তা (মডেল বান্ধবী),
রাজীব ওরফে জনি (ভাড়াটে খুনি),
দীপক (চালক),
ধর্মেন্দ্র ও শেহজাদ সাইফি (সহযোগী)।
আদালত মন্তব্য করেছে, “এই হত্যাকাণ্ড ছিল সম্পূর্ণ ঠান্ডা মাথার খুন, একটি নারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, যে নিজের পরিবার ও বৈবাহিক জীবন বাঁচাতে লড়াই করছিলেন।”