নিউজক্লিক (NewsClick) ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে চিন থেকে ফান্ডিং নেওয়ার অভিযোগ। সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এই অভিযোগ করেন। তিনি জানান, চিন, নিউজক্লিক এবং কংগ্রেস 'ভারত-বিরোধী কাজে' যুক্ত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আরও অভিযোগ, নিজের সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বজুড়ে চিনের হয়ে প্রচার করছেন এই সিংহম।
আসলে মার্কিন সংবাদপত্র 'দ্য নিউইয়র্ক টাইমস' একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানেই দাবি করা হয়েছে, নিউজ ওয়েবসাইট নিউজক্লিক গ্লোবাল নেটওয়ার্কের অংশ ছিল। এই ওয়েবসাইটটি আমেরিকান কোটিপতি নেভিল রায় সিংহমের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছিল।' কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বিস্ফোরক দাবি, নেভিল রায় সিংহম তাঁর নিউজক্লিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক এজেন্ডা গোটা বিশ্বে প্রচার করছে।
অনুরাগ ঠাকুরের কথায়, 'নিউজক্লিকের ফান্ডিং আসে বিদেশি নাগরিক নেভিল রায় সিংহমের কাছ থেকে। আর এই নেভিল রায় চিন থেকে টাকা পান। তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল চিনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং চিনা মিডিয়া কোম্পানি মাকু গ্রুপের প্রচার করা। নেভিল রায়ের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ? 'নিউইয়র্ক টাইমস' সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানেই তারা উল্লেখ করেছে, কীভাবে এই নেভিল রায় চিনের এজেন্ডা গোটা বিশ্বে প্রচার করছেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সিংহম চিনের সরকারি মিডিয়ার সঙ্গে মিশে কাজ করছে। তাদের প্রচার প্রচারে অন্তত ২৭৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিংহম অলাভজনক গ্রুপ এবং শেল কোম্পানির মাধ্যমে এই সব দিনের পর দিন করছে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাসাচুসেটসে সিংহমের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আছে, ম্যানহাটনে ইভেন্ট স্পেস রয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি রাজনৈতিক দলকে তিনি সমর্থন করেন এবং ভারত এবং ব্রাজিলের সংবাদ সংস্থাগুলিকেও প্রভাবিত করেন৷
২০২১ সালে ED এই সিংহমের বিরুদ্ধে একটি মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করে। অভিযোগ করা হয়েছিল, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, সিংহম চিনের প্রচার প্রচারের জন্য ৩৮ কোটি টাকা দেয় নিউজ সাইট নিউজক্লিক-কে। দাবি করা হয়েছে, এনজিও এবং শেল কোম্পানির মাধ্যমে সিংহম এই টাকা দেন। সেই সময়ে, ইডি নিউজক্লিক, এর সহযোগী সংস্থা, এর পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডারদের অফিসেও তল্লাশি চালায়। দাবি করা হয়, এই সময়ের মধ্যে ইডি বিদেশী মুদ্রা, অপরাধমূলক নথি এবং ডিজিটাল প্রমাণ বাজেয়াপ্ত করেছিল।
এবার প্রশ্ন নেভিল রায় সিংহম কে?
নেভিল রায় সিংহম একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী। তিনি সাংহাইতে থাকেন। তিনি জোডি ইভান্সকে বিয়ে করেছেন। জোডি ইভান্স 'কোড পিঙ্ক'-এর সঙ্গে যুক্ত। কোড পিঙ্ক হল সেই এনজিও যার একসময় উইগার মুসলিমদের উপর নৃশংসতার কথা অস্বীকার করে।
এই সিংহম নিজেকে একজন সামাজিক কর্মী হিসেবে পরিচিতি দেন। তিনি একজন উদ্যোক্তাও বটে। জানা গেছে, ১৯৮০-এর দশকে তিনি 'থটওয়ার্ক' নামে একটি কোম্পানি শুরু করেন। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত, সিংহম হুয়াওয়েতে একটু কোম্পানির পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। ২০১৭ সালে, সিংহম থটওয়ার্কস ৭৮০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়।
এবার প্রশ্ন সিংহম চিনের প্রচার কীভাবে ছড়াচ্ছে? নেভিল রায় সিংহম ও তার সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলোর চীনের হয়ে প্রচার চালাচ্ছে। এর আগেও নিউইয়র্ক টাইমসের একাধিক প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে, আমেরিকার ফেয়ারফ্যাক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থিঙ্কট্যাঙ্কের একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সিংগম কোড পিঙ্কের মতো সংস্থাকে ৬৫ মিলিয়ন ডলার দেয়।
২০২২ সালের নভেম্বরে, ফ্রান্সের পাবলিশার্স ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্ট আসে। সেখানে দাবি করা হয়, ইউক্রেনকে সমর্থনকারী পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে লবিং গ্রুপগুলোকে গোপনে টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে সিংহমের একটি অলাভজনক সংস্থা রয়েছে। এই সংস্খাও দুর্নীতিতে যুক্ত।
নেভিল রায়ের ভারতের সঙ্গে সংযোগ,
ইডি-র সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্রের দাবি, তিন বছরে, নিউজক্লিক ৩৮ কোটি টাকারও বেশি বিদেশী তহবিল পেয়েছে। এই পরিমাণ টাকা গৌতম নভলাখা, তিস্তা সেটালভাদ এবং তাদের সহযোগীদের দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে জানা গেছে, এই ৩৮.০৫ কোটি টাকার মধ্যে ৯.৫৯ কোটি টাকা এসেছে এফডিআইয়ের মাধ্যমে। আর সেবাক্ষত্র থেকে বাকি ২৮.৪৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে।
ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময়, নিউজক্লিকের ডিরেক্টর এবং শেয়ারহোল্ডার প্রবীর পুরকায়স্থ ওয়ার্ল্ডওয়াইড মিডিয়ার সঙ্গে তাঁদের সংযোগের কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা গেছে যে পুরকায়স্থ এবং সিংহম একসঙ্গে কোনও একটি প্রজেক্টে কাজ করছিলেন। আর সেটি চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। নে
নিউজ ক্লিকের বিবৃতি : নিউজক্লিক সোমবার সন্ধ্যায় বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এই বিবৃতিতে নিউজক্লিক দাবি করেছে যে তার বিরুদ্ধে কিছু রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া যে অভিযোগ করছে তা ভিত্তিহীন। নিউজক্লিক আরও জানিয়েছে, তারা আইনকে সম্মান করে। এবং মিডিয়া ট্রায়ালের অংশ হতে চান না।