scorecardresearch
 

Article 371: ৩৭০ ধারা নেই... কিন্তু এখনও ১৩টি রাজ্যে প্রযোজ্য 'বিশেষ' আইন, জানেন?

জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ সাংবিধানিকভাবে বৈধ। সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে শিলমোহর দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে শুধু জম্মু ও কাশ্মীর নয়। দেশের বেশ কিছু রাজ্যে সংবিধানের অধীনে কিছু বিশেষ অধিকার, নিয়ম রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ৩৭০ ধারা রদের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ৩৭০ ধারাকে 'অস্থায়ী বিধান' বলে উল্লেখ করেছে।

Advertisement
এই ১৩টি রাজ্যে এখনও বিশেষ আইন প্রযোজ্য এই ১৩টি রাজ্যে এখনও বিশেষ আইন প্রযোজ্য
হাইলাইটস
  • জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ সাংবিধানিকভাবে বৈধ। সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে শিলমোহর দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
  • তবে শুধু জম্মু ও কাশ্মীর নয়। দেশের বেশ কিছু রাজ্যে সংবিধানের অধীনে কিছু বিশেষ অধিকার, নিয়ম রয়েছে।
  • ৩৭১ ধারার মাধ্যমে, অন্যদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলিতে বিশেষ নিয়ম প্রয়োগ করা হয়। শুধু তাই নয়। এর মাধ্যমে উপজাতিদের সংস্কৃতিকে রক্ষা এবং স্থানীয়দের চাকরির অগ্রাধিকারও সুনিশ্চিত করা হয়।

জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ সাংবিধানিকভাবে বৈধ। সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে শিলমোহর দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে শুধু জম্মু ও কাশ্মীর নয়। দেশের বেশ কিছু রাজ্যে সংবিধানের অধীনে কিছু বিশেষ অধিকার, নিয়ম রয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ৩৭০ ধারা রদের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ৩৭০ ধারাকে 'অস্থায়ী বিধান' বলে উল্লেখ করেছে।

গত ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ ধারা রদ করে। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে দু'টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু পিটিশন জমা পড়ে।

আরও পড়ুন

সোমবার সেই পিটিশনের রায় দেওয়ার সময়, সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ৩৭০ ধারা একটি অস্থায়ী বিধান। রাষ্ট্রপতির এটি বাতিল করার অধিকার রয়েছে। 

৩৭০ ধারার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরকে 'বিশেষ রাজ্যে'র মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। এই ধারার কারণেই জম্মু ও কাশ্মীরে নিজস্ব সংবিধান এবং পৃথক পতাকা ছিল। অনেক কেন্দ্রীয় আইনও সেখানে প্রযোজ্য ছিল না। এর পাশাপাশি অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদেরও জম্মু ও কাশ্মীরে গিয়ে বাস করা, জমি কেনার বিষয়ে বিধিনিষেধ ছিল।

অনেকেই হয় তো জানেন না, এখনও কিন্তু বেশ কিছু রাজ্যে আইনের মাধ্যমে 'বিশেষ' মর্যাদা, নীতি প্রদান করা হয়।

'সংবিধান যখন কার্যকর হয়, তখন ৩৭১ অনুচ্ছেদ ছিল না'
অনুচ্ছেদ ৩৬৯ থেকে ৩৯২ সংবিধানের ২১ নম্বর অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অংশের নাম 'টেম্পোরারি, ট্রানজিশনাল অ্যান্ড স্পেশাল প্রভিশন'।

এরই ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন যে, '৩৭০ ধারা একটি অস্থায়ী বিধান। ৩৭১ ধারা একটি বিশেষ বিধান।'

Advertisement

সংবিধান যখন কার্যকর হয়েছিল, তখন ৩৭১ ধারা ছিল না। বরং বিভিন্ন সময়ে সংশোধনীর মাধ্যমে এগুলি যোগ করা হয়েছে।
৩৭১ ধারার মাধ্যমে, অন্যদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলিতে বিশেষ নিয়ম প্রয়োগ করা হয়। শুধু তাই নয়। এর মাধ্যমে উপজাতিদের সংস্কৃতিকে রক্ষা এবং স্থানীয়দের চাকরির অগ্রাধিকারও সুনিশ্চিত করা হয়।

সংবিধানের ৩৭১ নম্বর অনুচ্ছেদ ছাড়াও, বিভিন্ন রাজ্যের জন্য ৩৭১A থেকে ৩৭১J অনুচ্ছেদ  তৈরি করা হয়েছে। 

৩৭১ ধারা কি?
৩৭১ ধারা মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশের কিছু অংশে প্রযোজ্য। এর আওতায় মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের রাজ্যপালকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল বিদর্ভ ও মারাঠওয়াড়ার জন্য আলাদা উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করতে পারেন। গুজরাটের রাজ্যপাল সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছের জন্য আলাদা উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করতে পারেন।
অন্যদিকে, হিমাচল প্রদেশে কোনও বহিরাগত এখানে কৃষি জমি কিনতে পারবেন না।

ধারা-৩৭১A নাগাল্যান্ড
এটি ১৯৬২ সালে যোগ করা হয়েছিল। ৩৭১-A ধারার অধীনে নাগাল্যান্ডকে তিনটি বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে। 
প্রথমত, নাগা সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে ভারতের কোনও আইন প্রযোজ্য নয়।
দ্বিতীয়ত, ফৌজদারি মামলায় নাগারা রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি পাবেন। সংসদের আইন ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
তৃতীয়ত, অন্য রাজ্যের কেউ নাগাল্যান্ডে এসে জমি কিনতে পারবে না।

ধারা-৩৭১B অসম
এটি ২২ তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল। এটি অসমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এর অধীনে, রাষ্ট্রপতি অসম বিধানসভার কমিটি গঠন করার ক্ষমতা রাখেন। রাজ্যের উপজাতি এলাকা থেকে নির্বাচিত সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

ধারা-৩৭১C মণিপুর
২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে ধারা-৩৭১সি আনা হয়। এটি মণিপুরে প্রযোজ্য। এর অধীনে রাষ্ট্রপতি মণিপুর বিধানসভায় একটি কমিটি গঠন করতে পারেন।
রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা থেকে নির্বাচিত সদস্যরা এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। কমিটির কাজ হল রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী মানুষের স্বার্থে নীতি প্রণয়ন করা।

ধারা-৩৭১D অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা
এটি সংবিধানে ১৯৭৩ সালে যুক্ত করা হয়। এটি অন্ধ্রপ্রদেশে প্রযোজ্য ছিল। ২০১৪ সালে, তেলেঙ্গানা অন্ধ্র থেকে আলাদা হয়। এখন এটি উভয় রাজ্যের জন্যই প্রযোজ্য।
এর অধীনে, কোন শ্রেণীর লোককে কোন কাজের জন্য নিয়োগ করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের সকলে সমান অধিকার পাবেন।
এছাড়াও, অন্ধ্রপ্রদেশে ৩৭১E প্রযোজ্য। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে এখানে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অধিকার পায়।

ধারা-৩৭১F। সিকিম
এটি ৩৬ তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালে যুক্ত করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সিকিমের রাজ্যপালের রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার এবং এর জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
এর আওতায় সিকিমের বিশেষ পরিচয় ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, ১৯৬১ সালের আগে যারা রাজ্যে এসে বসতি স্থাপন করেছিল, শুধুমাত্র তারাই সিকিমের নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হবে এবং সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

অনুচ্ছেদ ৩৭১F-এর অধীনে, সিকিমের জমির উপর শুধুমাত্র এখানকার মানুষেরই অধিকার রয়েছে। বাইরের লোকজন এসে এখানে জমি কিনতে পারবে না।

ধারা-৩৭১G মিজোরাম
এটি ১৯৮৬ সালে ৫৩ তম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়। এটি মিজোরামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর অধীনে মিজো জনগণের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, প্রথাগত আইন ও ঐতিহ্য সম্পর্কে  সম্মতি ছাড়া সংসদ কোনও আইন করতে পারে না।
এ ছাড়া মিজো বহির্ভূত কাউকে এখানকার জমি ও সম্পদ দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ, জমির মালিকানার অধিকার শুধুমাত্র মিজোদেরই হাতে থাকবে।

ধারা-৩৭১H অরুণাচল প্রদেশ
৫৫ তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে এই অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছিল। এটি অরুণাচল প্রদেশে প্রযোজ্য। এর আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাজ্যপালকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যপাল চাইলে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাতিলও করতে পারেন। অন্য কোনো গভর্নরের এই ধরনের কর্তৃত্ব নেই।

Advertisement

ধারা-৩৭১I গোয়া
এটি গোয়ায় বিধানসভা গঠনের সাথে সম্পর্কিত। এর আওতায় গোয়া বিধানসভায় ৩০টির কম সদস্য থাকবে না।

ধারা-৩৭১J কর্ণাটক
এটি ২০১২ সালে ৯৮ তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল। এটি কর্ণাটকে প্রযোজ্য। এর আওতায় হায়দরাবাদ-কর্নাটক অঞ্চলের ছয়টি জেলাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এটিকে এখন 'কল্যাণ-কর্নাটক' বলা হয়।
৩৭১J-এর মাধ্যমে এই জেলাগুলির জন্য পৃথক উন্নয়ন বোর্ড গঠনের নিয়ম করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়দের চাকরি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও সংরক্ষণ লাগু করা যেতে পারে।
 

Advertisement