আয়ুর্বেদিক সংস্থা পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের মামলায় মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দেন বাবা রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণ। মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানুল্লাহর বেঞ্চ বলেন, এই মামলায় হলফনামা কোথায় পেশ করা হয়েছে? তখন রামদেবের আইনজীবী বলেন, 'দু’জনেই ক্ষমা চেয়েছেন। দুজনেই আদালতে উপস্থিত রয়েছেন।'
তখন আদালত সাফ জানায়,'আদালতের কার্যক্রমকে কোনওভাবে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। আমরা আপনার ক্ষমা গ্রহণ করতে পারি না। ২১ নভেম্বর আদালতের আদেশ সত্ত্বেও, রামদেব, বালকৃষ্ণ এবং পতঞ্জলি পরদিন একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। শুধু ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয়। সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছিল এবং পতঞ্জলির বিজ্ঞাপন ছাপা হচ্ছিল। আপনি দুই মাস পর আদালতে হাজির হয়েছেন।'
সুপ্রিম কোর্ট রামদেবের আইনজীবীকে বলেন, 'আপনার মিডিয়া বিভাগ আপনার থেকে আলাদা নয়। তাহলে এমনটা কীভাবে হল? গত নভেম্বরে আপনাকে সতর্ক করা হয়েছিল, তারপরও আপনি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। এটা কাম্য নয়।'
রামদেব বা পতঞ্জলির কার্যকলাপে আদালত যে আদৌ খুশি নয় তা বুঝিয়ে দেন বিচারপতিরা। শুনানির সময় বিচারপতিরা বলেন, 'আপনি কীভাবে আইন লঙ্ঘন করলেন? আদালতে আশ্বাস দেওয়ার পরও আপনি আইন লঙ্ঘন করেছেন। আপনি ফলাফলের জন্য প্রস্তুত হন। আইন পরিবর্তনের বিষয়ে আপনি কি মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?' ঠিক তখনই রামদেব হাতজোড় করে ক্ষমা চান।তিনি স্বীকার করে নেন যে, পতঞ্জলি ভুল করেছেন। তখন আদালত জানায়, 'আদালত অবমাননার জবাব দিতে হবে।'
রামদেবের পক্ষে ওকালতি করছিলেন বলবীর সিং। তিনি জানান, রামদের ও পতঞ্জলি ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তখন আদালত জানতে চায়, কেন সেটা রেকর্ডে নেই। বলবীর জানান, সেই হলফনামা প্রস্তুত ছিল। তবে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের পরই তাঁরা জমা দেবেন। সুপ্রিম কোর্ট বলে, 'দেশের সেবা করার অজুহাত তৈরি করা উচিত নয়।' রামদেবের আইনজীবী বলেন, 'ভবিষ্যতে এমন হবে না। আগে যে ভুল হয়েছে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।'
আদালতে ক্ষমাও চেয়ে নেন রামদেব। তিনি বলেন, 'এই আচরণে আমি লজ্জিত। আমরা বুঝি এটা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ।' বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, 'দেশের প্রতিটি আদালতকে সম্মান করতে হবে। আপনি আমাদের আদেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করলেই বোঝা যায় আদালতের প্রতি আপনার অনুভূতি কেমন।' আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে রামদেবের আইনজীবী বলেন, 'আমরা ভুল করেছি। আমরা নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী।'
প্রসঙ্গত, গত বছর পতঞ্জলির বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। নভেম্বর মাসেই, আদালত পতঞ্জলিকে বলেছিল, যদি এই আদেশ না মানা হয়, তবে তদন্তের পর কোম্পানির সমস্ত পণ্যের উপর ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। আসলে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (IMA) পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের বিজ্ঞাপনকে বিভ্রান্তিকর বলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল।
IMA-র অভিযোগ কী ছিল?
IMA অভিযোগ, পতঞ্জলি কোভিড -১৯ টিকা সংক্রান্ত একটি প্রচার চালিয়েছিল। এই বিষয়ে আদালত সতর্ক করেছিল, পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দায়ের করা পিটিশনে বলা হয়, পতঞ্জলির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের কারণে অ্যালোপ্যাথি ওষুধগুলিকে অবহেলা করা হচ্ছে।