ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে তিস্তা মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের দাবিতে পথে নামল সেই দেশের হাজার হাজার মানুষ। ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের কাছে মশাল হাতে জড়ো হন অনেকে। তাঁদের দাবি, তিস্তার জলের 'ন্যায্য অংশ' বাংলাদেশের প্রাপ্য। তা পেতে গেলে মাস্টার প্ল্যান করতে হবে।
সাধারণ মানুষ জমায়েতে যোগ দিলেও রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছিলেন এর আয়োজক। তাঁদের তরফে ভারত বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়। অভিযোগ করা হয়, তিস্তা নিয়ে ভারতের বঞ্চনার কারণে উত্তর বাংলাদেশের কৃষিকাজ মার খাচ্ছে।
এদিকে তিস্তা মাস্টার প্ল্যানের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য চিনের সাহায্য নিচ্ছে বাংলাদেশ। চিনের ইঞ্জিনিয়াররাও নাকি আসবেন গোটা পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন সমর্থিত এই মাস্টার প্ল্যানের উপর নির্ভর করছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের সুবিধা হবে। কিন্তু উদ্বেগও থাকছে। কেননা, এই তিস্তার কাছেই রয়েছে চিকেনস নেক। যা উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দেয়।
এর আগে ১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার জল নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। তার মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। তবে তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে বাংলাদেশ যদি একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ভারতের জল নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর প্রভাব পড়তে পারে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস মাস্টার প্ল্যান নিয়ে চিনের সাহায্য চেয়েছিলেন। সূত্রের খবর, এই প্ল্যানে চিন প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জন্য ৬,৭০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তার অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মতো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই পরিকল্পনাকে সমর্থনও করেছে। প্রাক্তন মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার দাবি করেছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভারতের উপর নির্ভরতা কমবে।
তবে তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কারণ আছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ, চিকেনস নেকের কাছের এলাকায় হবে এই মাস্টার প্ল্যান। আবার লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিতে সম্ভাব্য চিনা উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জাতীয় প্রয়োজনে সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এতে চিনের কোনও ভূমিকা নেই। তবে ভারতীয় কৌশলগত বিশেষজ্ঞ ব্রহ্মা চেল্লানি সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, চিন যদি এই অঞ্চলে সক্রিয় হয় তাহলে তারা ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি এবং কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হবে। সেটা ভারতের জন্য ভালো খবর হবে না।