সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দু’দেশের সম্পর্ক চাপের মুখে, তা বলাই বাহুল্য।ভারতীয়দের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ। নয়াদিল্লির পদক্ষেপের পাল্টা জবাব হিসেবেই ঢাকার এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দু’দেশের টানাপোড়েন চরমে, তা বলাই বাহুল্য।
গতকাল, রবিবারই বাংলাদেশে ভারতের ভিসা পরিষেবায় বড় কাটছাঁট করা হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (IVAC) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার কথা জানায় ভারত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ, যুবনেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু ঘিরে উত্তাল বাংলাদেশ। আওয়ামি লিগ সরকারের পতনের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে হাদির যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় রিকশায় করে যাওয়ার সময় তাঁর মাথায় গুলি লাগে। মুখোশধারী আততায়ীদের হামলায় গুরুতর জখম হন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার সেখানেই মৃত্যু হয় বছর ৩২ এর যুবনেতার।
হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাংলাদেশ জুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। একাধিক জায়গায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ভিত্তিহীন দাবিও তোলে সেদেশের সংবাদমাধ্যমের একাংশ। সেই আবহেই বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে। সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরই চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা পরিষেবা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।
ঢাকা ট্রিবিউন সূত্রে জানা গিয়েছে, IVAC-এর তরফে জানানো হয়েছে, ২১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামে সমস্ত ভারতীয় ভিসা সংক্রান্ত পরিষেবা বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পরে পুনরায় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সিলেটেও ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন এবং ভিসা কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম জানান, ‘কোনও তৃতীয় পক্ষ যেন পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে, সে কারণেই এই ব্যবস্থা।’
শনিবার হাদির শেষকৃত্য হয় ঢাকায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শেষকৃত্যে হাজির হন হাজার হাজার মানুষ। জানাজা শুরুর আগেও শোনা যায় ভারত-বিরোধী স্লোগান।
এই আবহেই সোমবার বাংলাদেশের তরফে ভারতীয়দের জন্য ভিসা পরিষেবা সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্ত। কূটনৈতিক মহলের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। প্রশ্ন উঠছে, এই অচলাবস্থা কতদিন চলবে? পরিস্থিতি কি আরও জটিল পথে এগোচ্ছে? আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক শিবির।