ভারত ও বাংলাদেশের জলসীমানার একেবারে কাছাকাছি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।ভারতের জলসীমায় বাংলাদেশের নৌবাহিনীর জাহাজের ধাক্কা। ডুবে গেল ভারতীয় মৎস্যজীবীদের একটি ট্রলার। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ জন মৎস্যজীবী নিখোঁজ। গভীর সমুদ্রে এই ঘটনা ঘটে। ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক জটিলতার আবহে এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক জলসীমা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ডুবে যাওয়া ট্রলারের নাম এফ বি পারমিতা। গত ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার খেয়াঘাট থেকে মোট ১৬ জন মৎস্যজীবী নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়েছিল ট্রলারটি। সোমবার ভোররাতে ভারত ও বাংলাদেশের জলসীমানার একেবারে কাছাকাছি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
আলো নিভিয়ে প্রবল বেগে এগিয়ে এসে ধাক্কা
অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ আলো নিভিয়ে দ্রুত গতিতে এসে ভারতীয় ট্রলারটিকে সজোরে ধাক্কা মারে। মুহূর্তের মধ্যেই ট্রলারটি জলে ডুবে যায়। সমুদ্রে ছিটকে পড়েন মৎস্যজীবীরা। স্থানীয় সূত্র ও প্রশাসনের দাবি, দুর্ঘটনার পর ১১ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পাঁচ জন এখনও নিখোঁজ।
অভিযোগ, ধাক্কা মারার পরেও বাংলাদেশি নৌবাহিনীর জাহাজটি উদ্ধারকাজে কোনও সাহায্য করেনি। প্রশাসন সূত্রে দাবি, দুর্ঘটনার পর জাহাজটি ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। সমুদ্রে ভেসে থাকা মৎস্যজীবীদের প্রাণ বাঁচানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করা হয়নি।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সমুদ্র আইন সংক্রান্ত কনভেনশন বা ইউএনসিএলওএস(UNCLOS) অনুযায়ী, কোনও দেশের জলসীমায় চলাচলের সময় অন্য দেশের জাহাজকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। পাশাপাশি, সমুদ্রে দুর্ঘটনা ঘটলে মানবিক কারণে উদ্ধারকাজে সাহায্য করা বাধ্যতামূলক। এমনকি আন্তর্জাতিক জলসীমাতেও ‘ডিউটি টু রেস্কিউ’ বা উদ্ধার করার দায়িত্ব সকল নৌযানের উপরেই বর্তায়। ফলে কেউ বিপদে, সমুদ্রে ভাসছে দেখেও সেখান থেকে পালানো কার্যত অপরাধের সামিল।
ভারতীয় জলসীমার মধ্যে আলো নিভিয়ে চলাচল করা এবং দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে অংশ না নেওয়া, দু'টিই আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি কূটনৈতিক স্তরে তোলা হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
এদিকে নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান চলছে। কোস্ট গার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধারকাজে নেমেছে। প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে পরিবারের সদস্যদের উৎকণ্ঠা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-বাংলাদেশ জলসীমা সংক্রান্ত নিরাপত্তা এবং মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।