scorecardresearch
 

বিপর্যয় মোকাবিলায় তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্ম, আরেক মাস্টারস্ট্রোক নবীনের

মমতার মতোই একটা সময় বিজেপি পরিচালিত এনডিএ-র সদস্য ছিলেন নবীন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেভাবেই ওড়িশা সরকার চলেছে। এরপর এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে আসেন নবীন। সেই তখন থেকেই কোনও পক্ষেই চলে যাননি তিনি। ২০১৯ সালে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ালেও বিজেপি বিরোধী মহাজোটে দেখা যায়নি নবীনকে। কেন্দ্রের তোষামোদ না করেও ওড়িশার ভোল যে তিনি বদলাচ্ছেন, অর্থনীতি তা বলে দিচ্ছে।

Advertisement
সার্ভে বলছে  প্রচার বিমুখ নবীনই কিন্তু দেশের সেরা মুখ্য়মন্ত্রী সার্ভে বলছে প্রচার বিমুখ নবীনই কিন্তু দেশের সেরা মুখ্য়মন্ত্রী
হাইলাইটস
  • বিরোধী হয়েও মোদীর গুডবুকে
  • সার্ভে বলছে প্রচার বিমুখ নবীনই কিন্তু দেশের সেরা মুখ্য়মন্ত্রী
  • দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী নবীনের জীবনের অজানা গল্প

বাংলার পড়শি রাজ্য ওড়িশা। নবীন পট্টনায়কের হাতে রাজ্যপাট রয়েছে প্রায় দু'দশক। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় সারা দেশে মোদী ঝড় বইলেও ওড়িশাকে কিন্তু কব্জা করা যায়নি।বরং পঞ্চমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নবীন পট্টনায়ক। তাঁর আগে আর কেউ পাঁচবার ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হননি। সেই সময়ে অনেকেই বলেছিলেন এবারের নির্বাচন বিজু জনতা দলের জন্য কিছুটা হলেও কঠিন হতে চলেছে। কারণ বাংলার পাশাপাশি ওড়িশাকেও টার্গেট করা হয়েছিল। কিন্তু ১৪৭ আসনের বিধানসভায় ১১২টি আসনেই জেতে বিজেডি। লোকসভা আসনের ক্ষেত্রে বাংলায় সেবার বিজেপির ঝড় উঠলেও ওড়িশায় কিন্তু  নিজেদের উপস্থিতি তেমন ভাবে জানাতে পারেনি ভারতীয় জনতা পার্টি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবের পর বারবার আলোচনায় উঠে আসছে নবীন পট্টনায়কের নাম। যেভাবে তিনি ওড়িশার ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন তাতে গুড গভর্নেন্স এর জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছেন নবীন। তবে ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়কের পুত্র কিন্তু বরাবরই মিতভাষী, প্রচারবিমুখ এবং দক্ষ প্রশাসক।  কদাচিৎ ওনাকে টিভিতে দেখা যায়। চাটুকারিতা, নিজের অফিসকে নাট্যশালা বানানো, গালি দিয়ে কথা বলা এসবেও উনি অপটু। শোনা যায়  মাতৃভাষাটাও সেরকম বলেন না। তুবও ওড়িশায় তাঁর জনপ্রিয়তায় কোনও খামতি নেই। এমনকি গতবছর সি ভোটারের সমীক্ষাতেও দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান পেয়েছিলেন নবীন। এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে এসেও সহজেই কেন্দ্রের কাছে নিজের দাবি আদায় করেছেন। প্রশংসা কুড়িয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীরও। সাধারণ চেহারার সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা লোকটা কী ভাবে হয়ে উঠলেন রাজনীতির 'রোল মডেল' সেই যাত্রাপথ কিন্তু যথেষ্ট রোমাঞ্চে ভরা।

 

 

বাবার মৃত্যু পাল্টে দিল জীবন
লেখক থেকে রাজনীতির ময়দানে আগমন। নবীন পট্টনায়কের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর।  ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়কের পুত্র নবীনের স্কুলজীবন কেটেছে দেরাদুনের ওয়েলহাম বয়েস স্কুল এবং দুন স্কুলে। এরপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কিরোরি মল কলেজ থেকে স্নাতক হন। অর্জন করেন ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৯৭ সালে রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বিজু জনতা দল। বাবা বিজু পট্টনায়কের নামেই করেন নামকরণ। ২০০০ সালের মার্চ মাসে প্রথমবার ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বরাবরই পাশ্চাত্য আদব কায়দায় স্বচ্ছন্দ্য নবীনের জীবনের মোড় কিন্তু ঘুরিয়ে দিয়েছিল তাঁর বাবার মৃত্যু। তার পরেই জীবনে এসেছিল বিশেষ পরিবর্তন। যে নবীন জিন্স ছাড়া আর কিছু পরতেন না তিনিই পাঞ্জাবি পরতে শুরু করলেন। আর কোনোদিন তাঁকে প্যান্ট-জামা পরতে দেখা গেল না। বিদেশে নিজের মাস্টার্স ডিগ্রি করেছিলেন। নিজের বুটিকও করেছিলেন একসময়। বরাবরই ওড়িশার বাইরে থাকা নবীন এখনও উড়িয়া ভাষাটা ঠিকমত বলতে পারেন না। ২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শিক্ষক রেখে শিখতে শুরু করেন ওড়িয়া। এক অচেনা রাজ্যের দায়িত্ব নিয়ে ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি ওড়িশার  সংস্কৃতি, ভূগোল, সামাজিক পরিস্থিতি-যাবতীয় বিষয়ের খুঁটিনাটিরও খোঁজ রাখতে শুরু করেন।

Advertisement

NDA থেকে বেরিয়ে এসেও নিজের দাবি আদায়ে সক্ষম
মমতার মতোই একটা সময় বিজেপি পরিচালিত এনডিএ-র সদস্য ছিলেন নবীন। ১৯৯৮  সাল থেকে ২০০৯ সাল  পর্যন্ত সেভাবেই ওড়িশা সরকার চলেছে। এরপর এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে আসেন নবীন। সেই তখন থেকেই কোনও পক্ষেই চলে যাননি তিনি। ২০১৯ সালে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ালেও বিজেপি বিরোধী মহাজোটে দেখা যায়নি নবীনকে। কেন্দ্রের তোষামোদ না করেও ওড়িশার ভোল যে তিনি বদলাচ্ছেন, অর্থনীতি তা বলে দিচ্ছে। তাই কেন্দ্রের থেকে মাত্র তিন মিনিটে নতুন রেলপ্রকল্পের অনুমোদন আদায় করে নিতে পারেন নবীন পট্টনায়ক। বারবার বঞ্চনার অভিযোগ তুলতে হয় না তাঁকে। 

 

 

হাজার সংঘাত সত্ত্বেও ভাঙেননি প্রটোকল
২০১৯ সালের মে মাসে সুপার সাইক্লোন ফণি আছড়ে পড়েছিল ওড়িশায়।  চল্লিশের উপরে প্রাণহানি ঘটলে মোদী সেখানে যান এবং খোদ মুখ্যমন্ত্রী নবীনের সঙ্গে আকাশপথে ক্ষয়ক্ষতি দেখেন। পরে বিজেডি নেতার ভূয়সী প্রশংসা করে মোদী বলেন যে এই দুর্দিনে তিনি ভালো কাজ করেছেন। প্রভাবিত উপকূলবর্তী রাজ্যটিকে আরও অর্থ সাহায্য করার কথাও বলেন। আর উল্টোদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নিয়ে বলেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ফোনই ধরেননি; জনসভা ইত্যাদির বাহানা দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফণী-র রিভিউ মিটিং। এরঠিক দু'বছর পর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বিধ্বস্ত ওড়িশা ও বাংলার একাংশের পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবারের চিত্রটাও সেই একই থাকলো। এবারও বিপর্যয় মোকাবিলায় নবীনের দুর্দান্ত কাজকে স্বীকৃতি দিয়ে আগামীতেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওড়িশার জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ৫০০ কোটি টাকা ত্রাণও দিলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেও রিভিউ মিটিংয়ে থাকলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

 

 

মানবিক নবীনের একের পর এক মাস্টারস্ট্রোক
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে ওড়িশার।  ২৪ ঘণ্টারও বেশি লাগাতার বৃষ্টিতে কার্যত বানভাসি চেহারা নেয় ওডিশার বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী এলাকা।  তারপরেও কেন্দ্রের তরফে ত্রাণের প্রয়োজন নেই তাঁর, ট্যুইট করেছিলেন নবীন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন,  করোনা-আবহে এমনিতেই কেন্দ্রের উপর অনেক বোঝা রয়েছে। তাই আমাদের রাজ্যে ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের জন্য আলাদা করে অর্থসাহায্য চাইছি না। আমাদের কাছে যা রসদ রয়েছে, তা দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করব। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিজের রাজ্যে ব্যাপক তাণ্ডব চালালেও করোনা আক্রান্ত রাজ্যগুলিকে ওই অবস্থাতেও অক্সিজেন পাঠাতে ভোলেলনি নবীন। ভবিষ্যত প্রজন্মও যাতে বিভিন্ন বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নেয় এবং সচেতন হয়, সেই উদ্দেশ্যেই স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে বিপর্যয় ও মহামারি মোকাবিলার পাঠ যোগ করতে চলেছে ওড়িশা সরকার। ওড়িশার ভোল তিনি  বদল করছেন। প্রশাসনটা উনি চালাতে জানেন বিজুর ছেলে তা মানছেন অনেক বিশেষজ্ঞই।। অর্থনীতিতেও তার ছাপ পড়ছে। 

Advertisement

তাই তিনিই দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী বলছে সমীক্ষা
করোনা সংক্রমণ রুখতে গত বছরই দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।  ৮২.৯৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।  তালিকায় ১৭ তম স্থানে ছিলেন  বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ সালে পঞ্চমবার ওড়ির মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ইতিমধ্যে জ্যোতি বসু, পবন চামলিং, গেগং অপাংদের ছুঁয়ে ফেলছেন নবীন পট্টনায়ক।   এবার ইয়াস নিয়ে  বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংঘাতের সময়ে নবীনের শিষ্টাচারকেই  তুলে ধরতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।


 

Advertisement