বিহার বাংলা সীমান্তের জেলাগুলির রেজাল্টইতিহাস বলে, অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ। অর্থাত্, বাংলা, বিহার ও ওড়িশা। তিনটি পৃথক রাজ্য হলেও, একেবারে ঘেঁষাঘেঁষি করেই বিদ্যমান তিন রাজ্য। বাংলার নিকটতম প্রতিবেশী রাজ্যের অন্যতম হল বিহার। এমনকী একসময় পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় চেয়েছিলেন, বাংলা ও বিহার একহয়ে একটি রাজ্য গড়ে উঠুক। যা 'বাংলা-বিহার সংযুক্তি প্রস্তাব' ছিল। পরে তা বাতিল হয়ে যায়। বিহারে, বিশেষ করে বাংলা-বিহার সীমাঞ্চলে ভোটের ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বরাবরই। দীর্ঘকাল ধরে বাঙালির স্বাস্থ্যরক্ষায় 'হাওয়া বদলের' ঠিকানায় কোন রাজনৈতিক দলের প্রভাব বেশি, তার আগ্রহ থেকেই যায়।
সীমাঞ্চলেও আরজেডি উপর ভরসা রাখছে না জনতা
২০২০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে সীমাঞ্চলের আসন ও জেলাগুলিই মুখ ফিরিয়েছিল লালুপ্রসাদ যাদবের RJD-র থেকে। ২০২৫ সালের নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, বাংলা-বিহার সীমানায় তিন জেলাতেই বিরোধীরা ধুয়ে মুছে সাফ। বাংলা সীমানা লাগোয়া বিহারের তিনটি জেলা হল পূর্ণিয়া, কাটিহার ও কিষাণগঞ্জ। বিহারের সীমাঞ্চল জুড়ে ভোটগণনা এগোতে থাকতেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এবারের নির্বাচনে এই অঞ্চলে গেরুয়া ঝড়। কোথাও ব্যবধান বড়, কোথাও কড়া টক্কর। সীমাঞ্চলের রাজনৈতিক ছবি এখন বেশ টানটান উত্তেজনায় ভরপুর।
কিষাণগঞ্জে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
সীমাঞ্চলের সবচেয়ে নজরকাড়া লড়াই এখন নিঃসন্দেহে কিষাণগঞ্জ। এখানে বিজেপির সুইটি সিং এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান খুব বেশি নয়। এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন তিনি পেয়েছেন ১৬,৮৩৫ ভোট, আর কংগ্রেসের মহম্মদ কামরুল হোদা পেয়েছেন ১২,২৬০ ভোট। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, মুসলিম-প্রধান কিষাণগঞ্জে বিজেপির এগিয়ে থাকা যতটা চমক, ঠিক ততটাই রাজনৈতিক তাৎপর্যও রাখে। কংগ্রেস যে এখনও এই আসনে টিকে লড়াই দিচ্ছে, সেটা কামরুল হোদার ভোটই প্রমাণ করছে।
পূর্ণিয়ায় বিজেপির দাপট স্পষ্ট
এই জেলাটিতে বাঙালি ভোটাররা বড় ফ্যাক্টর। পূর্ণিয়ায় ছবিটা অনেকটাই একপাক্ষিক হয়ে উঠেছে গণনার শুরু থেকেই। বিজেপির বিজয় কুমার খেমকা বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি এখনও পর্যন্ত পেয়েছেন ২৬,৯৫৯ ভোট, আর কংগ্রেসের জিতেন্দ্র কুমার পেয়েছেন মাত্র ১২,৪৩৬ ভোট। প্রায় ১৪,৫২৩ ভোটের ব্যবধান স্পষ্ট করছে, পূর্ণিয়ায় বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক অটুট রয়েছে। শহর-গ্রামের মিশ্র সামাজিক কাঠামো, ব্যবসায়ী মহলের ঝোঁক এবং গত কয়েক বছরের সংগঠনিক শক্তি, এই সব মিলিয়েই বিজেপিকে এখানে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে বলে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মত। এছাড়াও পূর্ণিয়ার বাঙালি ভোটব্যাঙ্কও দেখা যাচ্ছে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে রয়েছে।
কাটিহারে হাড্ডাহাড্ডি, ভিআইপি চমক
কাটিহারে কিন্তু ভোটের জমি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে বিজেপির তারকেশ্বর প্রসাদ এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান বেশ কম। তিনি পেয়েছেন ২১,৪০০ ভোট, আর ভিআইপি-র সৌরভ কুমার আগরওয়ালের ভোট ১৯,৪৮৯। ভিআইপি-র এই পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। সাধারণত দুই প্রধান দলের মধ্যে লড়াই হয় এমন এলাকায় ভিআইপি-র মতো তুলনামূলক ছোট দল যে এমন কাছাকাছি লড়াই দিচ্ছে, সেটা সীমাঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
সুতরাং বাংলা লাগোয়া বিহারের জেলাগুলিতে একটা স্পষ্ট প্রবণতা চোখে পড়ছে, বিজেপি এখানে এগিয়ে থাকলেও প্রতিটি আসনের রাজনৈতিক বাস্তবতা আলাদা। কিষাণগঞ্জে ধর্মীয় ও সামাজিক সমীকরণ পুরো ছবিটা পাল্টে দিতে পারে। পূর্ণিয়ায় বিজেপি শক্ত অবস্থান গড়ে তুললেও কাটিহারে তাদের সামনে ভিআইপি-র অবাক করা উত্থান চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।