গত ২৮ জুলাই 'অপারেশন মহাদেব' চালিয়ে পহেলগাঁও হামলায় জড়িত ৩ জঙ্গিকে নিকেশ করে ভারতীয় সেনা। মৃত ব্যক্তিরা সবাই পাকিস্তানের নাগরিক। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে পাকিস্তানের ভোটার কার্ডের স্লিপ, করাচিতে তৈরি হওয়া চকোলেট ও মাইক্রো এসডি চিফ।
পহেলগাঁও হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে জঙ্গিদের ব্যবহৃত AK-47 রাইফেলের শেলের খোসা উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। সেই সেল ও 'অপারেশন মহাদেবের' পরও মৃতদেহের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া রাইফেলের শেলও একই। এমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখার পর দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নিশ্চিত, এই হামলার পিছনে পাকিস্তানেরই হাত রয়েছে।
কী কী উদ্ধার হয়েছে?
'অপারেশন মহাদেব'-এ যে ৩ জঙ্গি নিকেশ হয় তাদের নাম সুলেমান শাহ, আবু হামজা ও ইয়াসির ওরফে জিবরান। সুলেমানের নেতৃত্বে চলে হামলা। সেই কমান্ডারের ভূমিকায় ছিল। তার ও আবু হামজার কাছ থেকে পাকিস্তানের ভোটার আইডির স্লিপও উদ্ধার হয়েছে। সেই কার্ডগুলোর নম্বর যথাক্রমে লাহোর এনএ-১২৫ ও গুজরানওয়ালা এনএ-৭৯।
জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামের মধ্যে ছিল একটা ক্ষতিগ্রস্ত স্যাটেলাইট ফোনও। সেখান থেকে যে মাইক্রো এসডি কার্ড মিলেছে সেটাও পাকিস্তানের।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা থাকত কাসুর জেলা ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোটের কাছে কেইয়ান গ্রামে।
এরাই পহেলগাঁওয়ে হত্যালীলা চালিয়েছিল
'অপারেশন মহাদেব'-এ মৃত ব্যক্তিরা পহেলগাঁওয়ে হামলা চালিয়েছিল। সেই তথ্য নিশ্চিত করে ফরেন্সিক ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষা। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর একটি ছেড়া শার্টে রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছিল। সেই রক্তের দাগের সঙ্গে জঙ্গিদের ডিএনএ ম্যাচ করেছে।
কবে ভারতে এসেছিল জঙ্গিরা?
কবে-কোন পথ দিয়ে জঙ্গিরা ভারতে প্রবেশ করেছিল সেই তদন্তও সম্পন্ন করেছেন গোয়েন্দারা। ২০২২ সালের মে মাসে জঙ্গিরা গুরেজ সেক্টরের কাছে এলওসি পেরিয়ে ভারতে ঢোকে। ২০২৫ সালের মে মাসে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকার কাছে ধোক নামে এক গ্রামের কুঁড়ে ঘরে আশ্রয় নেয়। পারভেজ ও বসির আহমেদ নামে স্থানীয় ব্যক্তিরা আশ্রয় দিয়েছিল তাদের। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করে।
হামলার দিন কী হয়েছিল?
২২ এপ্রিল সন্ত্রাসবাদীরা বৈসরন উপত্যকায় পায়ে হেঁটে আসে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ হামলা চালায় পর্যটকদের উপর। তারপর ফের হেঁটে পালিয়ে যায় দাচিগামের জঙ্গলের দিকে।
পহেলগাঁও হামলার পর বিশ্বের অনেক দেশ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বলেছে তারা। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাও বৈঠক করেছিলেন ৷ নিরীহ পর্যটকদের উপর নৃশংস সেই হামলার তীব্র নিন্দা করা হয় সেখান। সন্ত্রাসদমনে ভারতের পাশে থাকারও বার্তা দেওয়া হয় একাধিক সদস্য দেশের তরফে৷ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রেস বিবৃতিতে পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করলেও টিআরএফ-এর জড়িত থাকার বিষয়টি অপসারণে বাধ্য করে পাকিস্তান। যা নিয়ে সমালোচনার শিকার হতে হয় শেহবাজ শরিফের দেশকে।