কেরল বিস্ফোরণের দায় নিয়েছে ডমিনিক মার্টিন নামে এক ব্যক্তি। রবিবার নিজেই আত্মসমর্পণ করেছে ডমিনিক। ত্রিশুর জেলার কোড়াকারা থানায় আত্মসমর্পণ করার আগে রীতিমতো ফেসবুক লাইভ করেছে সে। বিস্ফোরণের পিছনে নিজের 'মোটিভ'ও ব্যাখ্যা করেছে।
এর্নাকুলাম বিস্ফোরণের তদন্তকারী পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরা ডমিনিকের দুবাই সংযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ডমিনিক মার্টিন দুবাইতে কী করত? সেটি জানতে তদন্তকারী সংস্থাগুলি তার অতীত খতিয়ে দেখছে। কল ডিটেইলস রেকর্ড খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ডমিনিক কাদের সঙ্গে কথা বলত, তা বের করছেন গোয়েন্দারা। তারপর সেই ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তদন্তে নেমেই জানা যায়, ডমিনিক মার্টিন বহু বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে বসবাস এবং কাজ করেছে। মাত্র দুই মাস আগে তার ভারতে প্রত্যাবর্তন।
ডমিনিক মার্টিন দুবাইয়ে ইলেকট্রিক কর্মী হিসেবে কাজ করত। বৈদ্যুতিক সার্কিট তৈরির বিষয়ে তার বেশ ভালই জ্ঞান ছিল। ডমিনিক মার্টিন প্রায় ১৫ বছর ধরে দুবাইতে ছিল। ভারতে ফিরে শিশুদের ইংরেজি টিউশনি পড়াত সে। দুবাইয়ে থাকাকালীন কাদের সঙ্গে ডমিনিকের যোগাযোগ ছিল? সেটাই এখন খুঁজে বের করছে তদন্তকারী সংস্থা।
তদন্তকারীরা ডমিনিক মার্টিনের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছে। সেখানে ডমিনিকের স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। ডমিনিক এখানে এসে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল। সেখানে পরিচয়পত্র হিসাবে এই আইডি দিয়েছিল।
কেরল বিস্ফোরণ
আত্মসমর্পণের আগে ফেসবুক লাইভ করেছিল ডমিনিক। তাতে এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে সে। NIA এবং NSG-র টিম এর তদন্তে নেমেছে। কনভেনশন সেন্টারের ভিতরে পার্ক করা গাড়িগুলি পরীক্ষা করার জন্য স্নিফার ডগ নিয়ে আসা হয়েছে।
রবিবারের যারা প্রার্থনা সভায় অংশ নিয়েছিল, তাদের গাড়ি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি গাড়ি বের হতে দেওয়া হয়নি।
অভিযুক্ত আত্মসমর্পণের আগে ফেসবুক লাইভ করেছিল। সেখানে সে বলে, 'আমি যিহোবার শিক্ষার সঙ্গে একমত নই, যদিও আমি তাদেরই একজন। আমার মতে তাদের আদর্শ বিপজ্জনক। এই দল দেশের জন্য বিপজ্জনক। এই মানুষগুলো ছোট বাচ্চাদের মনে বিষ ছড়াচ্ছে। ওদের আদর্শটাই ভুল। ওরা মিথ্যা প্রচার করছে। আজ কনভেনশন সেন্টারে প্রার্থনা সভার সময় যা কিছু ঘটেছে তার সম্পূর্ণ দায় আমি নিচ্ছি। আমাকে কারও খুঁজতে আসার দরকার নেই। কারণ আমি নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছি।
দুই হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন
এনাকুলামের কালামাসেরিতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের যিহোবার অনুগামীদের একটি প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। রবিবার তিনদিন ব্যাপী প্রার্থনা সভার শেষ দিন ছিল। কনভেনশন সেন্টারে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পর পর তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে।
কেরল বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩। ৩৯ জন আহত।
খবর পাওয়া মাত্রই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ব্যবস্থা নেয়। কোচি থেকে এনআইএ-র একটি দল পাঠানো হয়েছে এর্নাকুলামে। কেরলর মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে ফোন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এর আগে মালাপ্পুরমে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশের সঙ্গে এই বিস্ফোরণের যোগসূত্র নিয়ে জল্পনা চলছিল। সেখানে হামাসের একজন নেতা-খালেদ মাশায়েল ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে ভাষণ দেন।
দু'টি ঘটনার মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাগুলি এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।