সাংসদদের বেতন ও পেনশন ২৪ শতাংশ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ১ এপ্রিল, ২০২৩ থেকে তা পূর্ববর্তী প্রভাবে প্রযোজ্য হবে। সাংসদদের ভাতাও বেড়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, জীবনযাপনের জন্য ব্যয় ও মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে সাংসদদের বেতন-পেনশন বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংসদ সদস্যদের মাসিক বেতন প্রতি মাসে ১ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১.২৪ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। সোমবার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে এই তথ্য মিলেছে। তাদের দৈনিক ভাতা ২৫% বেড়ে ২ হাজার টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা করা হয়েছে। প্রাক্তন সাংসদের পেনশনও প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা থেকে ২৪% বৃদ্ধি করে ৩১ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এপ্রিল ২০১৮-র পর এই ধরনের প্রথম সংশোধনী, যার লক্ষ্য সংসদ সদস্যদের বেতন মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। তবে সংসদদের বেতনবৃদ্ধির পরে সাধারণ জনগণের মধ্যে আয় বৈষম্য সম্পর্কে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ সালে ভারতের আনুমানিক মাথাপিছু আয় ছিল ১.৭২ লক্ষ বা প্রতি মাসে প্রায় ১৪,৩৩৩ টাকা। এই পরিসংখ্যানগুলি দেখায় একজন প্রাক্তন সাংসদও একজন গড় ভারতীয়ের দ্বিগুণ পেনশন পান, যেখানে একজন বর্তমান সাংসদের আয় গড় ভারতীয়দের থেকে প্রায় ৯ গুণ বেশি।
সাংসদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আয়ের বৈষম্য
সাংসদরা দৈনিক ভাতা, নির্বাচনী ভাতা, বিনামূল্যে ভ্রমণ এবং বিনামূল্যে সরকারি বাংলোর মতো সুযোগ-সুবিধা পান। সাংসদদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন সাধারণ ভারতীয় নাগরিকেরা মুদ্রাস্ফীতির চাপে ওষ্ঠাগত। গত আর্থিক বছরের বেশিরভাগ সময়, ভারতে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৪% এর নির্ধারিত স্তরের উপরে ছিল। খাদ্যপণ্যের দাম প্রবল বেড়েছে। অনেক সেক্টরে, বিশেষ করে যারা অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে কর্মরত, তাদের বেতন বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে কোনও সমন্বয় নেই।
২০২২-২৩ সালের পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (PLFS) থেকে পাওয়া তথ্য দেখায় যে ভারতে বেতনভোগী কর্মচারীদের গড় বেতন সাংসদদের তুলনায় অনেক কম। উপরন্তু, সংসদ সদস্যদের তাদের নিজস্ব বেতন বৃদ্ধি নির্ধারণের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের বিষয়। সমালোচকরা যুক্তি দেন, সংসদে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্যরা তাদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে, একটি স্বাধীন কমিশনের দ্বারা এই জাতীয় সংশোধনীর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
একজন সাংসদ বছরে ৪২.৯ লক্ষ টাকা খরচ করবেন
সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পর সংসদ সদস্যদের পেছনে সরকারের মোট বার্ষিক ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এখন প্রত্যেক সাংসদ সরকারী কোষাগার থেকে বছরে আনুমানিক ৪২.৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করবেন, যার মধ্যে তাদের বেতন, ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধার ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বেতন ২৪% বৃদ্ধির কারণে, সংসদ সদস্যদের বার্ষিক বেতন ব্যয় ১৪.৮ লক্ষ টাকা বেড়েছে। এছাড়াও সাংসদরা দৈনিক ২,৫০০ টাকা ভাতা পাবেন। যদি বছরে ১০০ দিনের সংসদ অধিবেশন হয়, তাহলে একজন সাংসদের দৈনিক ভাতা হিসাবে বছরে ২.৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে।