ভারতের তৃতীয় চন্দ্র অভিযান চন্দ্রযান-৩ বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে। এর সঙ্গেই ইতিহাস রচনা করেছে ইসরো। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে ধুলো জমে যাওয়ার পর ল্যান্ডার বিক্রম থেকে বেরিয়ে আসে রোভার প্রজ্ঞান। আজ ভোরে রোভার তার যাত্রা শুরু করেছে। প্রজ্ঞান রোভার এখন চাঁদের পৃষ্ঠে হেঁটে বেড়াচ্ছে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো বলেছে, 'রোভার প্রজ্ঞান ল্যান্ডার থেকে নেমে এসেছে এবং ভারত চাঁদে হাঁটছে।'
বিশ্বে ভারতই প্রথম দেশ যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে মহাকাশযান অবতরণ করেছে। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন চাঁদের পৃষ্ঠে টাচডাউনের পর ল্যান্ডিং ইমেজার ক্যামেরাতে তোলা চাঁদের মাটির প্রথম ছবিও শেয়ার করেছে। চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার যে জায়গায় অবতরণ করেছে, সেখানে ১৫ দিন সূর্যের আলো থাকবে এবং ১৫ দিন পর আবার অন্ধকার হয়ে যাবে। ২৩ তারিখে অবতরণের পিছনে এটিও একটি কারণ ছিল, কারণ সেখানে এখনও আলো রয়েছে। কিন্তু ১৫ দিন পর সেই এলাকা আবার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তাপমাত্রা মাইনাস ২৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে আসে। এত তীব্র ঠান্ডায় দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান চালানো সম্ভব নয়। এই কারণেই এই মিশনটি আপাতত ১৪ দিন ধরে চলবে। দক্ষিণ মেরুতে আলো ও উত্তাপ বজায় থাকবে। রোভারে সোলার প্যানেল রয়েছে। এর মাধ্যমেই রোভারের ব্যাটারি চার্জ হবে।
প্রজ্ঞান রোভারের প্রাথমিক মিশন হল চন্দ্র পৃষ্ঠে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। এই পরীক্ষাগুলির লক্ষ্য চাঁদের ভূতত্ত্বের রহস্য উন্মোচন করা, এর গঠন এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানা। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যতদিন সূর্যালোক পাওয়া যাবে ততদিনই কাজ চালাবে এই দুটি যন্ত্র। সূর্যালোক চলে গেলেই ল্যান্ডার এবং রোভার শক্তি হারাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু এবং এর আশেপাশের এলাকা বেশ রহস্যময়। বিশ্ব আজও এ বিষয়ে অজ্ঞ। নাসার একজন বিজ্ঞানী বলেছেন যে আমরা জানি যে দক্ষিণ মেরুতে বরফ আছে এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদও থাকতে পারে। যাইহোক, এটি এখনও একটি অজানা পৃথিবী। নাসা বলেছে যে যেহেতু দক্ষিণ মেরুর অনেক গর্ত কখনও আলোকিত হয়নি এবং এর বেশিরভাগই ছায়ায় রয়ে গেছে, তাই সেখানে বরফ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে জমে থাকা জল কোটি কোটি বছরের পুরনো হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এটি সৌরজগত সম্পর্কে খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে সাহায্য করবে। নাসার মতে, যদি জল বা বরফ পাওয়া যায়, তাহলে তা আমাদের সৌরজগতে জল ও অন্যান্য পদার্থের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের বরফ প্রকাশ করেছে যে হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের গ্রহের জলবায়ু এবং বায়ুমণ্ডল কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে। জল বা বরফ পাওয়া গেলে তা পান করা, শীতল করার যন্ত্রপাতি, রকেটের জ্বালানি তৈরি এবং গবেষণা কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।