
ভারতের রেলপথের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে শুক্রবার। চেনাব সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশ্বের এই সর্বোচ্চ রেল ব্রিজটি কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত করবে। কেন এটিকে গেম চেঞ্জার ধরা হচ্ছে?
আইফেল টাওয়ারের থেকেও উঁচু
রিয়াসি জেলার বক্কাল ও কৌরি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত চেনাব সেতুটি চেনাব নদীর উপর ৩৫৯ মিটার (১,১৭৮ ফুট) উচ্চতায় নির্মিত হয়েছে, যা আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার উঁচু। এই ১,৩১৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ১৭টি স্প্যান ও ৯৩টি ডেক সেগমেন্ট নিয়ে গঠিত, প্রতিটি সেগমেন্টের ওজন প্রায় ৮৫ টন। সেতুটি ১২০ বছরের স্থায়িত্বের জন্য পরিকল্পিত এবং এটি ভূমিকম্প, প্রবল ঝড় এবং বিস্ফোরণের প্রতিরোধে সক্ষম ।
কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের সংযোগ
উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল সংযোগ প্রকল্পের অংশ এই চেনাব ব্রিজ। ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে ৩৬টি সুড়ঙ্গ (মোট দৈর্ঘ্য ১১৯ কিমি) ও ৯৪৩টি সেতু রয়েছে। প্রকল্পটি প্রায় ৪৪ হাজার কোটি ব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে এবং এটি কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সারাবছর রেলপথে সংযুক্ত করবে।
ঐতিহাসিক মাইলস্টোন
চেনাব ব্রিজের নির্মাণ ভারতীয় রেলওয়ের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। দুর্গম এবং ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে নির্মাণ শ্রমিকদের। এটি ভারতের একটি আইকনিক নির্মাণশৈলী হতে চলেছে।
কেন গেমচেঞ্জার?
এটি ভারতের একটি বিরাট কৌশলগত সাফল্য হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে, কাশ্মীর উপত্যকাকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করার একমাত্র স্থলপথ ছিল ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়ক। তবে শীতকালে তুষারপাতের কারণে এই সড়কটি প্রায়শই বন্ধ রাখতে হত। ভূমিধসের কারণেও এই সড়কটি বহু সময়ে অপ্রবেশযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলে চেনাব ব্রিজ সারা বছর সীমান্ত এলাকায় সেনা ও সরঞ্জাম পরিবহণে সহায়ক হবে। একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য যাত্রাপথ হিসেবে এটিকে দেখাচ্ছে মোদী সরকার।
উল্লেখ্য, চেনাব নদী আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সেই ঝুঁকিও কাটিয়ে দেবে এই যাত্রাপথ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রেল সংযোগ কাশ্মীরের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে। এটি কাশ্মীরি আপেল, শুকনো ফল, হস্তশিল্পসহ অন্যান্য পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পৌঁছে দেবে।
পহেলগাঁও হামলার রেশ এখনও কাটেনি। কাশ্মীরের পর্যটক ব্যবসা তথৈবচ। এরকম পরিস্থিতিতে চেনাব ব্রিজের উদ্বোধনকে গেমচেঞ্জার হিসেবেই দেখা হচ্ছে। চেনাব রেল সেতু শুধু পর্যটক নয়, কাশ্মীরের মানুষদের জন্যও নতুন আশার আলো বয়ে আনতে পারে।