অবসর গ্রহণের পর বিচারপতিদের রাজনীতিতে যোগদান সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহের জন্ম দেয়। মন্তব্য করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি বি আর গভই। বিচারবিভাগের স্বচ্ছতা ও বৈধতা নিয়ে ব্রিটেনে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় যোগ দেন প্রধান বিচারপতি। সেখানেই নিজের মতামত রাখেন তিনি।
বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা ও অবসর গ্রহণের পর তাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন গভই। জানান, ভারতে বিচারকদের কোনও মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। তারপরই তাঁর সংযোজন, 'যদি কোনও বিচারক অবসরের পরপরই কোনও সরকারি নিয়োগ পদ গ্রহণ করেন বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পদত্যাগ করেন, তাহলে তা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এমনকী বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে।' প্রধান বিচারপতি আরও জানান, তিনি এবং তাঁর অনেক সহকর্মী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অবসর নেওয়ার পর কোনও সরকারি পদ গ্রহণ করবেন না। গভইয়ের মতে, বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া খুব জরুরি।
বিচার বিভাগের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তিনি আরও জানান, এই ধরনের ঘটনা জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করে। তবে ভারতে এমন কোনও ঘটনা সামনে এলে সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক এবং কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আঞ্চলিক ভাষায় রায়ের অনুবাদ ও বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য লাইভ স্ট্রিমিংকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন গভই। ভুল খবর পরিবেশনের ফলে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম হতে পারে- দাবি করে সাম্প্রতিক একটি মামলার উদাহরণ দেন তিনি। জানান, একজন বিচারকের হালকাভাবে দেওয়া পরামর্শ মিডিয়াতে ভুল প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা হয়, এতে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন 'ভুয়ো খবর এবং প্রেক্ষাপটের বাইরে রিপোটিং হলে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে।'
বিচার ব্যবস্থা রাজনীতি নিরপেক্ষ নয়- এমন দাবি করে থাকেন অনেকে। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই নিয়ে সরবও হয়। তা নিয়ে গভই জানান, বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার জন্য ভারতে কলেজিয়াম ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে কিন্তু কোনও সমাধান বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মূল্যে হওয়া উচিত নয়। বিচারকদের বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকা উচিত, যাতে তারা নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।