মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সে দিন এএফসি কাপের প্লে-অফে ম্যাচ ছিল হায়দরাবাদ এফসি-র। বল পায়ে ছুটছিলেন তিনি। ঠিক তখনই মণিপুরে তাঁর বাড়ি হিংসার আগুনে পুড়ছে। নিজের হাতে তৈরি সাধের ফুটবল অ্যাকেডেমিও রেহাই পায়নি। সেই ম্যাচ খেলে ড্রেসিংরুমে ঢুকে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়েই দেখলেন মিসড কল এবং মেসেজের বন্যা। মণিপুরের ফুটবলার চিংলেনসানা সিংহ সঙ্গে সঙ্গে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তখন ফোন করে কাউকে পাচ্ছিলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর পান মণিপুরের হিংসার ঘটনায় প্রায় সব কিছু হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
চিংলেনসানা যখন খেলছিলেন, ঠিক তখনই হিংসার আগুনে পুড়ছিল তাঁর বাড়ি। একটি ফুটবল মাঠ গড়েছিলেন শিক্ষার্থিদের জন্য, সেটাও ততক্ষণে পুড়ে খাক। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে এই সেন্টার ব্যাক বলেছেন, ‘আমাদের বাড়ি মণিপুরের চুরাচাঁদপুরের খুমাজামা অঞ্চলে। আমার পরিবারের লোকেরা সবাই ত্রাণ শিবিরে ছিল। আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। সুন্দর বাড়িটা, সুন্দর সেই মাঠ, যেখানে প্রাণভরে শ্বাস নিতাম, সবটা তছনছ করে দিয়েছে ওরা। এই হিংসা বন্ধ হোক। আমার পরিবার যদি ঠিক সময়ে না পালাত, কী হতে আমি জানি না। আমার আতঙ্ক লাগে ওইসব চিন্তা করলে।’
সেদিন বহু চেষ্টার পর ২৭ বছরের চিংলেনসানা তাঁর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কথা বলার সময় শুনছিলেন বন্দুকের আওয়াজ। সিদ্ধান্ত নেন মা-বাবার কাছে যাবেন। একটুও দেরি করতে চাননি। তাঁর বাড়ি, গ্রাম, তরুণ ফুটবলারদের তৈরি করার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে। শুধু পরিবার বেঁচে রয়েছে। চিংলেনসানা বলেন, "অ্যাকাডেমি বাঁচাতে না পারলেও, বাবা-মা ঠিকঠাক ছিলেন। এক পরিচিত ওঁদের রক্ষা করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যায়। আর একটু দেরি হলে আরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।"
অনেক স্বপ্ন নিয়ে এবং স্থানীয় ফুটবলারদের সাহায্য করতে একটি মাঠ ও অ্যাকাডেমি বানিয়েছিলেন ভারতীয় দলের ফুটবলার। কিন্তু হিংসার ঘটনায় সব কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় শুধু হতাশই নন একইসঙ্গে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ভারতীয় দলের এই ফুটবলার।