এবার প্রেম দিবসে নতুন নিদান দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা পশু কল্যাণ পরিষদ৷ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে গরুকে আলিঙ্গন করুন! যে দিনটি বিশ্বজুড়ে প্রেম দিবস হিসেবে পালিত হয়। সেই দিনটিকেই এ বার ‘গো-আলিঙ্গন দিবস’ পালন করার আর্জি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের যুক্তি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমি সংস্কৃতির অগ্রগতির কারণে বৈদিক ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে। গরুকে আলিঙ্গন করলে মানসিক সমৃদ্ধি আসবে। যা আমাদের ব্যক্তিগত সুখ বৃদ্ধি করবে। সেই কারণেই আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সকল গোপ্রেমীদের কাছে কেন্দ্রের আর্জি, গরুকে জড়িয়ে ধরে ‘গো-আলিঙ্গন দিবস’ উদ্যাপন করুন৷
এই বিবৃতির পর থেকেই হাসির রোল উঠেছে সামাজিক মাধ্যমগুলিতে। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মিমস। তবে আলিঙ্গনে যে চাপমুক্তি ঘটে, সে কথা জোর গলায় দাবি করেন বিশ্বের জ্ঞানীগুণী বহু থেরাপিস্টই৷ আলিঙ্গন-থেরাপিস্টরা বলেন, কাডল করা বা হাগিং অথবা সোজা বাংলায় জড়িয়ে ধরলে নাকি মন ভালো থাকে। তবে যেকোনও গরুকে জড়িয়ে ধরলেই হবে না, আপনার আলিঙ্গন গরুটি চায় কী না, তাও বুঝতে হবে। তবেই উপকার পাওয়া যাবে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে গরুর ধীরগতির হৃদস্পন্দন, উষ্ণ শরীরের তাপমাত্রা এবং বড় আকারের কারণে, গরুকে আলিঙ্গন করা মানুষকে একটি প্রশান্তিদায়ক অভিজ্ঞতা দেয়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ কেয়ারিং সায়েন্সেস-এর ‘বেনিফিটস অফ অ্যানিমাল অ্যাসিস্টেড থেরাপি ইন মেন্টাল হেলথ’ শিরোনামের একটি প্রবন্ধ অনুসারে, প্রাণীর যোগাযোগ মানুষের হিতে অবদান রাখে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে প্রাণীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, সেরোটোনিন এবং এন্ডোরফিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয়, যা করটিসল এবং অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ হ্রাস করার সাথে সাথে সুখ এবং প্রশান্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে।
ভারতের প্রাণী কল্যাণ বোর্ড তার বিবৃতিতে বলেছে, "আমরা সবাই জানি যে গরু ভারতীয় সংস্কৃতি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড, আমাদের জীবনকে টিকিয়ে রাখে এবং গবাদি পশুর সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি 'কামধেনু' এবং 'গৌমাতা' নামে পরিচিত কারণ এর পুষ্টিকর প্রকৃতি, মায়ের মতো, সকলের দাতা, মানবজাতিকে সম্পদ প্রদান করে।" সারা বিশ্বের অসংখ্য সংস্কৃতিতে গরুকে পবিত্র বলে মনে করা হয় এবং মাদার আর্থ বা জীবনদাতাকে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায়।
কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবাদ শিরোনামে গরু এসেছে বারবার। গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে বিতর্ক, হিংসা, গোমাতাকে রক্ষা করার নানান টোটকা, গরু রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি উদ্যোগ গোয়াল তৈরি যেমন হয়েছে, অন্যদিকে গরুর উপকারিতা নিয়ে আজব সব দাবি উঠেছে। গোবর, গোমূত্র, এমনকী গরুর নিঃশ্বাসে কঠিন রোগ সেরে যায় বলে দাবিও করা হয়েছে। এমনকি গরুর দুধে সোনা আছে বলেও দাবি করা হয়েছিল একটা সময়ে।
নেদারল্যান্ড, সুইৎজারল্যান্ড, আমেরিকা সহ বিশ্বের নানা দেশে এই ধরনের থেরাপি চালু আছে। গরু, ঘোড়া, ছাগলকে জড়িয়ে ধরে মানসিক চাপ কমানোর থেরাপি নতুন নয়। জানলে অবাক হবেন, নেদারল্যান্ডে তো গোট-যোগার চলও আছে। নিজের মনকে নিজেই সারিয়ে তুলুন, এর জন্য পশুদের জড়িয়ে ধরুন–বিশ্বের বিভিন্ন দেশের থেরাপিস্টের বক্তব্য এমনই। গরুকে আদর করে, পিঠে ভাল করে হাত বুলিয়ে তারপর কিছুক্ষণ জড়িয়ে থাকলে নাকি শরীরের হ্যাপি হরমোনগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর নিমেষে নাকি মনের যত চাপ, উদ্বেগ, ভয়-আতঙ্ক সব কমে যায়।
আমেরিকার বিভিন্ন খামারে ঘণ্টা হিসেবে গরুকে জড়িয়ে ধরার জন্য টাকা নেওয়া হয়। এক ঘণ্টার জন্য গরুকে জড়িয়ে থাকার এই থেরাপির জন্য প্রায় ২০০ ডলার গুনতে হয়।
আরও পড়ুন- Valentines day: ভ্যালেন্টাইনস ডে-এর দিন জড়িয়ে ধরুন গরুকে, পরামর্শ কেন্দ্রের