আরজি করে ক্রাইম সিন পরিবর্তন করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে বিস্ফোরক CBIআরজি কর-কাণ্ডে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে বিস্ফোরক দাবি করল সিবিআই। তাদের দাবি, ক্রাইম সিনের পরিবর্তন করা হয়েছে। নির্যাতিতা ডাক্তারের পরিবারকে আত্মহত্যার কথা বলে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের বিষয়ে স্টেটাস রিপোর্টে এই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
গত সোমবারের শুনানিতে আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সিবিআইয়ের কাছে তদন্ত নিয়ে স্টেটাস রিপোর্ট চেয়েছিল শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও এই বেঞ্চের বাকি দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র। আরজি কর হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়েও বৃহস্পতিবার রাজ্যকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সিবিআই-র স্টেটাস রিপোর্ট জমা পড়ে শীর্ষ আদালতে।
সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা রিপোর্টে সিবিআই বলেছে যে এই পুরো মামলার ব্যাপারে হাসপাতাল প্রশাসনের মনোভাব উদাসীন। নিহতের পরিবারকে ঘটনাটি দেরিতে জানানো হয়। আত্মহত্যার কথা প্রথমে পরিবারকে জানানো হয়। হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা সন্দেহের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আদালত তখন বলে, পুলিশ ডায়েরি এবং ময়নাতদন্তের সময়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অভিযুক্তের মেডিকেল টেস্ট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত।
CJI চন্দ্রচূড় অভিযুক্তের আঘাতের মেডিকেল রিপোর্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিবাল সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন যে এটি কেস ডায়ারিতে রয়েছে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা তখন বলেন যে সিবিআই পঞ্চম দিনে তদন্তভার নিয়েছে। সবকিছু পরিবর্তন করা হয়েছে এবং তদন্ত সংস্থা জানত না যে এমন একটি রিপোর্ট আছে। সিনিয়র অ্যাডভোকেট সিবাল পাল্টা বলেন, সবকিছু ভিডিওগ্রাফ করা হয়েছে। কোনও কিছু পরিবর্তন করা হয়নি। এসজি মেহতা বলেন, মৃতদেহ দাহ করার পরে রাত ১১টা ৪৫ এ এফআইআর করা হয়েছিল। মৃত চিকিৎসকের সহকর্মীরা জোর করার পরেই ময়নাতদন্তের ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছিল এবং যার অর্থ তাঁরাও কিছু সন্দেহ করেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চনামা নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছে। আদালত বলে, স্বাভাবিক মৃত্যু হলে ময়নাতদন্ত কেন করা হল? ময়নাতদন্তের পর এফআইআর অবাক করেছে। সিজেআই ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, একটি দিক অত্যন্ত বিরক্তিকর, সকাল ১০টা ১০ এ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ডিডি এন্ট্রি রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থল সিল রাতে করা হয়েছে। সিবাল জানান যে তাঁরা ভিডিওগ্রাফি নিয়ে টাইমলাইন জমা দিয়েছেন।
পোস্টমর্টেমের সময় সম্পর্কে পুলিশকেও জিজ্ঞাসা করে সুপ্রিম কোর্ট। সিনিয়র অ্যাডভোকেট সিবাল জানান যে সন্ধে ৬টা ১০ থেকে ৭টা ১০ পর্যন্ত ময়নাতদন্ত চলেছে। তখন আদালত জিজ্ঞাসা করে যখন মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন তখন এটি কি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ছিল না? যদি এটি অস্বাভাবিক মৃত্যু না হয় তবে ময়নাতদন্তের কী দরকার ছিল? সিবাল সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন যে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট কবিল সিবালকে আরও বলেছে, অনুগ্রহ করে একটি দায়িত্বশীল বিবৃতি দিন এবং তাড়াহুড়ো করে বক্তব্য দেবেন না। কেসের পরবর্তী শুনানিতে পুলিশ অফিসারকে উপস্থিত রাখার কথাও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কারণ হিসেবে আদালত জানিয়েছে যে কখন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছিল তার উত্তর তারা এখনও পায়নি। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, এই মামলাটি মর্মান্তিক। গত ৩০ বছরে এমন ঘটনা আমরা দেখিনি। পুরো ঘটনাটিই চমকপ্রদ। বাংলার পুলিশের আচরণ লজ্জাজনক।'