চিন্তায় হাওড়ার শেষ মুঘল বংশধর সুলতানা বেগম।-ফাইল ছবিদিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় সোমবার বিকেলে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাওড়ার শেষ মুঘল বংশধর সুলতানা বেগম। তাঁর গলায় মিশে ছিল ক্ষোভ, হতাশা আর দীর্ঘদিনের অবহেলার হাহাকার। ইতিহাসের উত্তরাধিকারী হয়েও আজ তিনি সাধারণ জীবনের সঙ্গে লড়ছেন, তবু দেশের ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর টান একটুও কমেনি।
বিস্ফোরণের খবর জানার পরেই তিনি প্রতিক্রিয়া জানান, 'হ্যাঁ, দিল্লির ঘটনার কথা আমি শুনেছি, নথিও। শোনার পরে খুব খারাপ লেগেছে। কারণ, এটা এমন এক ঐতিহ্য, যা অতীতে গড়ে উঠেছিল। এখন কেউই তেমন কিছু করতে পারে না। কিন্তু যদি এই কাজ না হয়, কেউ ভিতরে যাবে না, কেউ টিকিট কিনবে না, তাতে সরকারেরই ক্ষতি হবে।'
এরপরেই সরকারের দায়বদ্ধতা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, 'যা কিছু ঘটছে, তার সম্পূর্ণ দায় সরকারের। দায়িত্ব সরকারেরই হওয়া উচিত, যাতে তারা জায়গাটিকে ভালোভাবে রক্ষা করে, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়, আর যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে। যদি আমরা এখন চুপ করে থাকি, মানুষ আরও উদাসীন হয়ে পড়বে, এতে সরকারেরই ক্ষতি হবে।'
লালকেল্লা থেকে আগ্রা, ফতেপুর সিক্রি, জামা মসজিদ, সবই যে এক ঐতিহ্যের প্রতীক, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, 'লালকেল্লা, জামা মসজিদ, মিনা বাজার, আগ্রার তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, সবই তো মুঘল সম্রাটদের সৃষ্টি। এগুলো শুধু আমাদের নয়, গোটা দেশের ঐতিহ্য। মুঘল হোক বা সরকার, এই নামগুলোই তো হিন্দুস্তানের মুখচিত্র।”
নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি বাহাদুর শাহ জাফরের পুত্রবধূ। একসময় মানুষ আমাদের দেখতে কত চেষ্টা করত, অনুমতি নিত, চিঠি লিখত। আজ আমি সাধারণ মানুষের মতো। না আছে টাকা, না আছে শক্তি। লড়েছি অনেক, কিন্তু কিছুই ফল হয়নি। হয়তো আমার ভাগ্য খারাপ, হয়তো সময় খারাপ।'
ইতিহাসের ধ্বংস নিয়ে তাঁর আক্ষেপ, 'হ্যাঁ, এটাই এখন হচ্ছে, ওরা ধ্বংস করতে চাইছে আমাদের ইতিহাসকে। কিন্তু এতে কার উপকার হবে? এতে সরকারেরই ক্ষতি। আমি শুধু চাই, সরকার যেন এর দায়িত্ব নেয়। যতদিন তারা এটি দেখছে, ততদিন এটি তাদেরই কর্তব্য।'
দিল্লির ঘটনায় যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে বলেন তিনি, 'যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যদি তাঁদের প্রকৃত বিচার হয়, তাহলে ওঁরাই নিজেরাই সত্য বলবেন, কে তাদের এই ঘটনা ঘটাতে পাঠিয়েছে, কে কী করেছে। এই ব্যাপারে আপনি বা আমি কিছু বলতে পারি না। সত্য কথা তাঁদের মুখেই শোনা যাবে।'
শেষে ইতিহাসের প্রতি এক গভীর গর্বের সঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের বংশবরের ইতিহাস গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে। মুঘল সম্রাট লালকেল্লা গড়েছিলেন, তিনিই তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। এই নামগুলোই তো আমাদের দেশের পরিচয়। আজও আমি গর্বিত, এগুলো হিন্দুস্তানের গৌরব।'
সংবাদদাতা- বৈদ্যনাথ ঝাঁ