দিল্লির ঘটনাস্থলে ফরেনসিক।-ফাইল ছবিদিল্লির লালকেল্লার সামনে বোমা হামলার তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলির দাবি, এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের সূত্র মিলছে উত্তরপ্রদেশের একাধিক জেলার সঙ্গে। বিশেষ করে লখনউ এবং লখিমপুর খেরি জেলাকে ঘিরে সন্দেহের জাল ঘন হচ্ছে। গুজরাটের আহমেদাবাদে গ্রেফতার হওয়া তিন সন্দেহভাজনের মধ্যে একজন লখিমপুরের বাসিন্দা, অন্যদিকে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ লখনউয়ের এক মহিলা ডাক্তারকে গ্রেফতার করেছে। দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্রে নড়েচড়ে বসেছে গোয়েন্দা মহল।
গুজরাটে গ্রেফতার লখিমপুরের যুবক
গুজরাট ATS সম্প্রতি আহমেদাবাদ থেকে ISKP মডিউলের সঙ্গে যুক্ত ৩ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে লখিমপুর খেরির নিঘাসন এলাকার ঝালা গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সোহেল অন্যতম। সে মুজাফফরনগরের জামিয়া দারুল উলুম আজিজিয়া মাদ্রাসায় ধর্মীয় পড়াশোনা করত। পরিবারের দাবি, সোহেল একজন শান্ত স্বভাবের ছাত্র, যিনি কখনও কোনও অপরাধমূলক কাজে জড়াননি। তারা অভিযোগ করেছেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।
সুলেমান শেখের সঙ্গে সম্পর্ক
ATS সূত্রে জানা গেছে, সোহেলের সঙ্গে শামলি জেলার সুলেমান শেখের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দুজনেই একই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত এবং সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এই সম্পর্কের মাধ্যমেই উত্তর প্রদেশে জঙ্গি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।
লখনউয়ের ডাক্তার গ্রেফতার
অন্যদিকে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ লখনউয়ের লালবাগ এলাকার বাসিন্দা ডাঃ শাহীন শহীদকে গ্রেফতার করেছে। তদন্তে জানা গেছে, তাঁর গাড়ি ব্যবহার করত ডাঃ মুজামিল নামে এক ব্যক্তি, যিনি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ওই গাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে একটি রাইফেল ও তাজা গুলি। পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে, শাহীন জানতেন কি না তাঁর গাড়িটি অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
উত্তর প্রদেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক বিস্তার
তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে উত্তর প্রদেশের লখিমপুর, সিদ্ধার্থনগর ও শ্রাবস্তী প্রভৃতি সীমান্তবর্তী জেলায় জঙ্গি সংগঠনগুলি তরুণদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে। অনলাইন মাধ্যমেই তাদের সংগঠনে যুক্ত করা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি।
পরিবারের দাবি: নির্দোষ সোহেল
সোহেলের বাবা সেলিম ও মা রুখসানা জানান, তাদের ছেলে কখনও উগ্রপন্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। রুখসানার কথায়, 'আমার ছেলে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল। এক সপ্তাহ আগে সে ফোন করে শুধু শীতের পোশাকের জন্য টাকা চেয়েছিল। এখন বলছে জঙ্গি! এটা বিশ্বাস করা যায় না।'
যোগী সরকারের কঠোর নির্দেশ
দিল্লি বিস্ফোরণের পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি পুলিশ মহাপরিচালক রাজীব কৃষ্ণের সঙ্গে উচ্চস্তরের বৈঠক করে গোটা রাজ্যে হাই অ্যালার্ট জারি করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী-
সংবেদনশীল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
বাজার, ধর্মীয় স্থান ও পরিবহনকেন্দ্রে বিশেষ নজরদারি চলবে।
সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।
মেট্রো, রেলস্টেশন ও মলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ATS, বোমা স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াডকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজের রিয়েল-টাইম বিশ্লেষণ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ঠেকাতে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।
যোগী সরকারের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, 'কোনও পরিস্থিতিতেই শৈথিল্য বরদাস্ত করা হবে না। রাজ্যের নাগরিকদের নিরাপত্তাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।'