রাস্তার ধারে ডিম বিক্রি করে সাংসার চালান, সেই যুবকই পেলেন ইনকাম ট্যাক্সের নোটিশ। মধ্যপ্রদেশের দামোহ জেলার পাথারিয়া শহরে ঘটেছে এই ঘটনাটি। এই নোটিশে প্রায় ৫০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে ওই যুবকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। একজন ছোট ডিম বিক্রেতার জন্য এই টাকার অঙ্কের পরিমাণ কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি।
কোটি টাকার ব্যবসা করছেন একজন ডিম বিক্রেতা?
যুবকের নাম প্রিন্স সুমন, যিনি পাথারিয়ায় রাস্তার ধারে ডিম বিক্রি করে সংসার চালান। সম্প্রতি তিনি আয়কর বিভাগের কাছ থেকে একটি নোটিশ পেয়েছেন, যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৪৯,২৪,৫৭,২১৭ টাকার লেনদেনের বিবরণ চাওয়া হয়েছে। নোটিশে বিল, ভাউচার, ট্রান্সপোর্ট রেকর্ড এবং গত ২ বছরে কেনা জিনিসপত্রের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টের মতো নথি চাওয়া হয়েছে। এই নোটিশ পেয়ে প্রিন্স আকাশ থেকে পড়েছেন। কারণ তিনি কখনও এত টাকা চোখেই দেখেননি। ২০ মার্চ জারি করা নোটিশটি পড়ে প্রিন্স এবং তাঁর পরিবার হতবাক হয়ে যান। সুমন বলেন, 'সারাদিন ডিম বিক্রি করে আমি ২০০-৪০০ টাকা আয় করতে পারি। ৫০ কোটি টাকার কথা বলাটা অন্য জগতের কিছু মনে হচ্ছে।'
বিরক্ত এবং হতাশ হয়ে প্রিন্স স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং দামোহের পুলিশ সুপারের অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে একটি ভুয়ো কোম্পানি কেলেঙ্কারির তথ্য বেরিয়ে আসে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে যে প্রতারকরা প্রিন্সের ব্যক্তিগত নথির অপব্যবহার করে তাঁর নামে একটি ভুয়ো কোম্পানি তৈরি করেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, দিল্লিতে 'প্রিন্স এন্টারপ্রাইজ' নামে একটি কোম্পানি রেজিস্টার করা হয়েছিল, যার ঠিকানা ছিল জোন ৩, ওয়ার্ড ৩৩, দোকান নং ডি ৩১, ফ্ল্যাটেড ফ্যাক্টরি ঝান্ডেওয়ালান, ফিটেড ফ্যাক্টরি কমপ্লেক্স, দিল্লি।
এছাড়াও, জাল নথি ব্যবহার করে এই ফার্মের জন্য একটি জিএসটি নম্বরও তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে, এই কোম্পানিটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন করেছিল। সংস্থাটি চামড়া, কাঠ এবং লোহার ব্যবসা করেছিল, কিন্তু জিএসটি দেয়নি। এখন প্রায় ৬ কোটি টাকা জিএসটি বকেয়া রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন যে প্রিন্স একজন সরল এবং পরিশ্রমী যুবক। যার কাছে এই পুরো ঘটনাটি দুঃস্বপ্নের চেয়ে কম নয়। প্রিন্স বলেন, 'আমি জানি না আমার নামে কীভাবে এই সব ঘটেছে। আমি কেবল আমার পরিবারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করি।' প্রিন্স জানান যে তিনি কখনও দিল্লি যাননি। ২০২৩ সালে তিনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে ইন্দোরে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কাউকে তাঁর প্যান কার্ড বা আধার কার্ড দেননি।
প্রিন্সের বাবা শ্রীধর সুমন, তিনি একটি ছোট মুদির দোকান চালান। তিনি বলেন, যদি ন্যায়বিচার না পাওয়া যায়, তাহলে পরিবারের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। অ্যাডভোকেট অভিলাষ খারে বলেন, তথ্য পাওয়ার পর আমরা আয়কর বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। যুবকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের কাছেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।