Fertility Rate in India: দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রজনন হার ২০২৩ থেকে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, এখানে প্রজনন হার ০.৭২ শিশু প্রতি মহিলার পৌঁছেছে। এই পতন একটি গুরুতর সংকট। উল্লেখ্য যে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতও প্রজনন হার হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে। যদিও ভারতে প্রজনন হার হ্রাস দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় ধীর, তবে এটি দেশের জন্যও উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে।
রাষ্ট্র সংঘ (UN) অনুসারে, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হয়েছে। ১০ নভেম্বর, ২০২৪ এর মধ্যে, দেশের জনসংখ্যা ১,৪৫৫,৫৯১,০৯৫ এ পৌঁছাবে। রাষ্ট্রসংঘের মতে, ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১,৪২৫,৭৭৫,৮৫০। তবে একটি সমীক্ষা বলছে, ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমাগত কমছে। যেখানে ১৯৫০ সালে প্রজনন হার ছিল ৬.২, ২০২১ সালে তা ২%-এ নেমে আসে। দাবি করা হচ্ছে, প্রজনন হার এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে তা ১.৩-এ নেমে আসতে পারে। এই হিসাবে, ২০৫৪ সালে দেশের জনসংখ্যা ১.৬৯ বিলিয়নে পৌঁছতে পারে এবং ২১০০ সালের মধ্যে মাত্র ১.৫ বিলিয়নে নেমে আসবে।
যদিও গত কয়েক বছর ধরে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত, ডিএমকে নেতা স্টালিন এবং চন্দ্রবাবু নাইডু ধারাবাহিকভাবে মানুষকে ৩টির বেশি সন্তান নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু পরিস্থিতির দিকে তাকালে এটাই এখন দেশের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনে পরিণত হতে চলেছে। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ দেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা তরুণদের চেয়ে বেশি হবে। এমতাবস্থায় নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগে যে, কী কারণে মানুষ পরিবার পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না? এখানে আপনি এই ৫ পয়েন্টে উত্তর বুঝতে পারেন-
ভারতে প্রজনন হার হ্রাসের কারণ
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং চাকরির অনিশ্চয়তা শিশুদের প্রতিপালন করা পরিবারের জন্য আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। এমতাবস্থায় একের অধিক সন্তান নেওয়ার কথা ভাবতেই মানুষ আজ ভয় পেয়েছে।
নারীদের অগ্রাধিকার পরিবর্তন
প্রাচীনকালে নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা শুধুমাত্র পরিবার গড়ে তোলা ও পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীরা নিজেকে শুধু মা হিসেবে নয়, অর্থনৈতিকভাবে সফল নাগরিক হিসেবে দেখতে চায়। এমতাবস্থায় নারীরা যেমন চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন, শিক্ষা ও কর্মজীবনে অগ্রসর হচ্ছেন, তেমনি তারা বিয়ে ও সন্তান ধারণের প্রয়োজনে পিছিয়ে দিচ্ছেন।
দেরিতে বিয়ে
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বিয়েতে দেরি করতে শুরু করেছে। যার কারণে পরিবার পরিকল্পনাও বিলম্বিত হচ্ছে। এছাড়াও, ছোট পরিবারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার কারণে, লোকেরা আরও সন্তান নেওয়ার চিন্তা এড়িয়ে চলে।
বন্ধ্যাত্ব
লাইফস্টাইল, মানসিক চাপ এবং পরিবেশগত কারণে বন্ধ্যাত্বের ক্রমবর্ধমান ঘটনাও দেশের নিম্ন প্রজনন হারের জন্য দায়ী। এছাড়াও, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা এবং এর বিকল্পগুলিও ব্যয়বহুল, যা একটি সাধারণ আয় সহ পরিবারের পক্ষে বহন করা কঠিন।
ভারতের ভবিষ্যৎ সহজ হবে না
এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়, কারণ তরুণরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমন পরিস্থিতিতে এই পতন চলতে থাকলে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে প্রভাব পড়তে পারে।
কেন প্রজনন হার কমছে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা বিশ্বে উর্বরতা সংক্রান্ত অনেক চ্যালেঞ্জ উদ্ভূত হচ্ছে। এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন এবং ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় জানা গেছে যে গর্ভাবস্থা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশির ভাগ মানুষই ভাবছেন, কম শিশু জন্মালে দেশের জনসংখ্যা কমে যাবে এবং এতে লাভ হবে, তবে তাদের জানা উচিত যে কম প্রজনন হারের কারণে অনেক অসুবিধা রয়েছে।
কম ফার্টিলিটি হারের অসুবিধাগুলি কী কী?
সন্তান না থাকলে দেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে। এক গবেষণায় নারীর প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে দেশ ও সমাজের ওপর এর প্রভাব দেখা গেছে। এর মতে, প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় শিশুদের চেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষ আশেপাশে দেখা যাবে। এতে শ্রমশক্তি কমে যাবে, যা কোনও দেশের জন্যই ভালো নয়।