Fertility Rate Andhra Pradesh: হাম দো হামারে দো-র কনসেপ্ট ভুলে যান। অবাক হচ্ছেন? আসলে পরিস্থিতি কিন্তু সেদিকেই যাচ্ছে। ব্যাপারটা একটু খোলসা করা যাক।
ফার্টিলিটি রেট (Fertility Rate) হল একজন নারী কতজন সন্তান জন্ম দেন, তার একটি গড় হিসাব। এটি মূলত 'টোটাল ফার্টিলিটি রেট' (Total Fertility Rate, TFR) নামে পরিচিত। সাধারণত ১৮-৪৯ বছর বয়সী নারীদের প্রজনন ক্ষমতা মাপা হয়। একটি নির্দিষ্ট বছরে প্রতি ১,০০০ জন নারীর সন্তান জন্মদানের গড় সংখ্যাকে টোটাল ফার্টিলিটি রেট বলে। দক্ষিণ ভারতে, সেই ফার্টিলিটি রেটই ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। মনগড়া কথা নয়, খোদ অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্র এন চন্দ্রবাবু নাইডু, পরিসংখ্য়ানের ভিত্তিতেই এমনটা বলেছেন। দুই বা তার বেশি সন্তান থাকলে বিশেষ সুবিধার কথাও ভাবছে তাঁর সরকার।
গোটা দেশে ফার্টিলিটি রেট ২.১। সেখানে অন্ধ্রে সংখ্যাটা ১.৬। অর্থাৎ মহিলা পিছু জন্মদানের সংখ্যাটা দেশের গড়ের তুলনায় কম।
কিন্তু এতদিন ট্রেনে-বাসে ভিড়, চাকরির ফর্ম ফিলআপ-এর লাইনে সবাই বেশি-বেশি জনসংখ্যাকেই গালি দিয়ে এসেছেন। হালের ইংরাজি স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে গিয়ে, ফি শুনে আঁতকে উঠেছেন বাবারা। মনে মনে অনেকেই এক বা দুইয়ের বেশি সন্তান না করাই নিজের ও দেশের মঙ্গল ধরে নিয়েছেন।
তাহলে হঠাৎ চন্দ্রবাবু নাইডু সেই সংখ্যা বাড়াতে চাইছেন কেন?
খেয়াল করবেন, আগের বেশ কয়েক প্রজন্মে এক-এক দম্পতির দুইয়ের অধিক সন্তান খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল। সেই প্রজন্মগুলির বয়স হচ্ছে। এদিকে নতুন প্রজন্মে বেশিরভাগই এক বা বড়জোর দুই শিশুর বাড়ি।
এতে ভবিষ্যতে, যুবসমাজের অনুপাতে বৃদ্ধের সংখ্যা অত্যাধিক বেশি হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরিসংখ্যান, সমীক্ষা সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের 'ইয়ুথ ইন ইন্ডিয়া ২০২২' রিপোর্টের অনুমান অনুযায়ী, ২০৩৬ সালের মধ্যে, ভারতের জনসংখ্যায় যুবকদের অংশ ২২.৭%-এ নেমে আসবে। বৃদ্ধের অংশ দাঁড়াবে ৭৭%।
২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যায় যুবসমাজের অংশ ২৭.২%।
'ন্যাশানাল ইয়ুথ পলিসি ২০১৪' অনুযায়ী যুবসমাজ ধরা হয় ১৫-২৯ বছরের পুরুষ ও নারীদের।
সবই তো বোঝা গেল, কিন্তু এতে সমস্যা কোথায়?
ভাবছেন যত কম মানুষ, তত ভাল... কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা নয়।
কেস স্টাডি হিসাবে চিন ও জাপানের দিকে দেখতে পারেন। সেখানে বৃদ্ধ জনসংখ্যার হার দ্রুত বাড়ছে, যা উভয় দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর ফলে কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে।
২০২০ সালের পর থেকে চিনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতি ও সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে। ১৯৮০ সালে চালু হওয়া এক সন্তান নীতির ফলে জন্মহার কমতে শুরু করে, যদিও পরে দুই ও তিন সন্তান নীতি চালু করা হলেও, তা প্রভাবশালী হয়নি। জীবিকা ও জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার চাহিদার কারণে অনেক পরিবার সন্তান কম নেওয়ার দিকে ঝুঁকছে, যা দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে আরও কমিয়ে দিয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশের সম্পদ তার যুবসমাজ। কারণ যুবসমাজই নতুন প্রযুক্তি, কঠোর পরিশ্রমে মুখ্য ভূমিকা নেয়। সেই যুবসমাজের রেশিও কমে গেলেই তখন বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য।
যুবসমাজের সংখ্যা কমলে কী হতে পারে:
১. কর্মী সংকট: কম জনসংখ্যা হলে শ্রমশক্তি কমে যায়, যা দেশের উৎপাদনশীলতাকে হ্রাস করে।
২. অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষতি: কর্মক্ষম মানুষের অভাবে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
৩. বয়স্কদের যত্নের সমস্যা: বেশি বয়স্ক মানুষের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখা কঠিন হয়।
৪. যুব সম্প্রদায়ের অভাব: নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির উন্নয়নে যুবকদের অভাব সমস্যার সৃষ্টি করে।
৫. ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা: কম প্রজনন হার ভবিষ্যতে জনসংখ্যায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
৬. মার্কেট ছোট হয়ে যাবে: কম শিশু এবং কম নতুন পরিবার গঠনের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ ভোগ ও খরচ কমবে। এতে ব্যবসা এবং বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। খেয়াল করে দেখুন, বেশিরভাগ বড় ব্যবসারই কিন্তু মূল অস্ত্র দেশের এই বিপুল জনসংখ্যা। এই কারণেই এদেশে ডেটা-ইন্টারনেট, খাবার, বাসস্থান কম জনসংখ্যার উন্নত দেশের তুলনায় অনেক সস্তা। কারণ বড় কাস্টমার বেস হলে লাভের মার্জিন কম রাখা যায়। কিন্তু এত বেশি বিক্রি হয় যে পুষিয়ে যায়। তাছাড়া কর্মীও সস্তায় পাওয়া যায়।
৭. সরকারের করবাবদ আয় কমবে: যুবসমাজের সংখ্য়া যদি একেবারে কমে যায়, বা জনসংখ্যা যদি হ্রাস পায়, সেক্ষেত্রে সরকারের করবাবদ আয়ও কমে যাবে। এতে বড় উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মূলধনে টান পড়বে।
পরে আরও খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে
গত বছর রাষ্ট্র সংঘ 'ইন্ডিয়া এজিং রিপোর্ট 2023' প্রকাশ করেছিল। এই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ২০৫০ সালের মধ্যে বয়স্ক-প্রবীণরা ভারতের জনসংখ্যার ২০.৮% হবে। বয়স্ক মানে যাঁদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি। এর মানে, ২০৫০ সালের মধ্যে, ভারতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২১ জন বৃদ্ধ হবে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ভারতে প্রবীণদের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যায় ১৫ বছরের কম বয়সী মানুষের অংশ কমছে।
তাই এবার থেকে জন্মহার, প্রজনন নিয়ে কোথাও তর্কাতর্কি হলে এই পরিসংখ্যানগুলি কাজে লাগাতে পারেন। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে আপনার কী মতামত? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
তথ্যসূত্র: পিপল আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়া