
জাপানের মেগা ভূমিকম্পের আশঙ্কা সমগ্র বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অফ ফায়ারে অবস্থিত, যেখানে সর্বদাই বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে। এই অ্যালার্টের পর থেকে ভারতেও ভূমিকম্প প্রবণতা আলোচনায় উঠে এসেছে। হিমালয় এলাকাও কি এমন জোরাল ভূমিকম্পের সাক্ষী থাকতে পারে? প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। বিজ্ঞানীরা অবশ্য অভয় দিয়ে বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে প্রস্তুতি অপরিহার্য।
মেগা হিমালয় ভূমিকম্প কী?
হিমালয়ের নীচে একটি প্রধান ফল্ট লাইন রয়েছে। যাকে মেইন হিমালয় থ্রাস্ট বলা হয়। এখানে ভারতীয় টেকটনিক প্লেট ধীরে ধীরে ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে নেমে যাচ্ছে। এর ফলে শতাব্দী ধরে চাপ তৈরি হয়ে রয়েছে। যখন এই চাপ ছেড়ে দেওয়া হয় তখন ৮ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
এই ধরনের ভূমিকম্প ভারত, নেপাল এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাহাড় ধসে পড়বে, ভূমিধস হবে এবং বহুতল ভেঙে পড়তে পারে। হিমালয় পর্বতমালা অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ। বাড়িঘর এবং বহুতলগুলিও এই এলাকায় ভঙ্গুর। তাই ক্ষতি পরিমাণও অপরিসীম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এরকম ভূমিকম্প আগেও হয়েছে
> ১৯৩৪ সালের বিহার-নেপাল ভূমিকম্প (৮ মাত্রা)- কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু
> ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্প (৭.৮ মাত্রা)- ৯ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু
ভারত নিয়ে কেন উদ্বেগ?
জাপান সম্প্রতি একটি মেগা ভূমিকম্পের সতর্কতা জারি করেছে। নানকাই খাদে একটি বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই হিমালয় পর্বতমালা এলাকাতেও ভারতের বিভিন্ন ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উভয় অঞ্চলে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্প হয়ে থাকে প্রায়শই। তবে ভারত এবং জাপানের পরিস্থিতি ভিন্ন।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির পরিচালক ডা: ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, 'হিমালয় বর্তমানে আমাদের রক্ষা করছে। ছোট ছোট ভূমিকম্প (২.৫-৩.৫ মাত্রা) এখানে প্রায়শই ঘটে। ধীরে ধীরে জমতে থাকা চাপ মুক্ত করে। এগুলি খুব বেশি ক্ষতি করে না। তবে বড় ভূমিকম্প প্রতিরোধ করে হিমালয়। অতএব, এখনই মেহা হিমালয় ভূমিকম্প নিয়ে চিন্তা করার কারণ নেই।'
সিসমিক ক্রিপ কথার অর্থ কোনও বড় ধাক্কা ছাড়াই চাপ অব্যাহত থাকা। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, হিমালয় বর্তমানে একটি সেফটি ভালব হিসেবে কাজ করছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী বিপদ রয়েছে। টেকটনিক প্লেটের চলাচল থামেনি। যে কোনও সময়ে উল্লেখযোগ্য চাপ তৈরি হতে পারে।
নয়া ভূমিকম্প মানচিত্র
সম্প্রতি ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের মানচিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে একটি বড় পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। নতুন ভূমিকম্প নকশায় সম্পূর্ণ হিমালয়কেই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে জোন-৪ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
বর্তমানে দেশের ৬১% এলাকা মাঝারি থেকে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং গুজরাটের মতো অঞ্চলগুলি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে নতুন বহুতলগুলি আরও শক্তিশালী ভাবে তৈরির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
প্রস্তুতি হিসেবে ভারত কী করছে?
> অবিরাম পর্যবেক্ষণ: হিমালয় জুড়ে সিসমোগ্রাফ স্থাপন করা হয়েছে।
> আগাম সতর্কীকরণ হ্যবস্থা: কয়েক সেকেন্ড আগে অ্যালার্ট করার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করুন।
> সচেতনতা: ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে তা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার।
> শক্তিশালী বহুতল নির্মাণ: নতুন বহুতলগুলি ভূমিকম্প প্রতিরোধী করে তৈরি করতে হবে।
সতর্কবার্তা
জাপানের সতর্কীকরণ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। কিন্তু ভারতে এখনও বড় ভূমিকম্পের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে প্রকৃতির খেলা কারও জানান নেই। বিজ্ঞানীরা বলেন, যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।