হরিয়ানার রোহতকে কংগ্রেস নেত্রী হিমানি নারওয়ালের হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ এই মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে এবং মূল অভিযুক্ত সচিনকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, যেখানে ধরা পড়েছে সম্পর্ক, ব্ল্যাকমেইলিং এবং খুনের পরিকল্পনার নানা দিক।
ফেসবুক বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্কের জটিলতা
প্রায় দেড় বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচয় হয় সচিন এবং হিমানির। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয় যে সচিন হিমানির বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতেও সচিন হিমানির বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু পরের দিন সকালে তাদের মধ্যে তীব্র তর্কবিতর্ক শুরু হয়, যা একসময় হাতাহাতিতে পরিণত হয়।
হত্যার পরিকল্পনা ও ঘটনার বিবরণ
২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে দুজনের মধ্যে তীব্র ঝগড়া শুরু হয়। পুলিশের দাবি, সচিন ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং হিমানিকে ওড়না ও মোবাইল চার্জারের তার দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এই সময় ধস্তাধস্তিতে সচিনের হাত কেটে যায়, যার ফলে রক্ত হিমানির কম্বলে পড়ে। হত্যার প্রমাণ লোপাট করতে সে কম্বলের কভার খুলে ফেলে এবং মৃতদেহ একটি বড় স্যুটকেসে ভরে রাখে।
মৃতদেহ লুকোনোর চেষ্টা
সচিন রাত ১০টায় আবার হিমানির বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর একটি অটো ভাড়া করে, মৃতদেহসহ স্যুটকেসটি নিয়ে সাম্পলা এলাকায় পৌঁছায়। গভীর রাতে সাম্পলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে স্যুটকেসটি ফেলে দিয়ে সে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ১ মার্চ সকালে পথচারীরা স্যুটকেসটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ ও পুলিশের তদন্ত
পুলিশি জেরায় সচিন দাবি করেছে, হিমানির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং হিমানি তার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছিল। সে আরও দাবি করে, হিমানি তাকে ব্ল্যাকমেইল করছিল এবং আরও অর্থ দাবি করছিল। শচীনের কথায়, অনেক টাকা দেওয়ার পরেও হিমানির চাহিদা শেষ হচ্ছিল না। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে সে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পুলিশ এখনও এই দাবির সত্যতা যাচাই করছে।
পরিবারের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
হিমানির পরিবার অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে এবং হত্যার সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেহ দাহ স্থগিত রেখেছিল। হিমানির মা সবিতা নারওয়াল বলেন, "আমার মেয়ের হত্যাকারীকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে।" এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস এটিকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যর্থতার উদাহরণ হিসেবে দেখাচ্ছে, অন্যদিকে বিজেপি এটিকে ব্যক্তিগত শত্রুতার ফলাফল বলে দাবি করছে।
সতর্কবার্তা ও সামাজিক শিক্ষা
এই হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্কের ঝুঁকিও সামনে এনেছে। পুলিশের মতে, ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।