ভারতে প্রথমবারের মতো হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)-এ আক্রান্ত একটি শিশুর সন্ধান মিলেছে। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা আট মাসের এই শিশুটি বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতর এবং চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগ বিশেষ অ্যাডভাইজারি জারি করেছে।
এইচএমপিভি আক্রান্ত শিশুর অবস্থা
বেঙ্গালুরুর ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে ভর্তি শিশুটির বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট ছিল। চিকিৎসকদের সন্দেহের ভিত্তিতে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে এইচএমপিভি পজেটিভ আসে। যদিও শিশুর পরিবারের কোনও বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই, তবু এই ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সরকারি ল্যাবরেটরির পরীক্ষার প্রস্তুতি
কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, শিশুটির নমুনা সরকারি ল্যাবরেটরিতেও পরীক্ষা করা হবে। বর্তমানে প্রাইভেট হাসপাতালে করা পরীক্ষায় ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।
এইচএমপিভি: ভাইরাসটির পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য
হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। এটি নিউমোভিরিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি আরএনএ ভাইরাস, যা মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের ফোঁটা এবং দূষিত পৃষ্ঠের সংস্পর্শে ছড়ায়।
মূল বৈশিষ্ট্য: শিশু, বয়স্ক এবং ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তিদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।
বেশিরভাগ মানুষ ৫ বছর বয়সের আগেই এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়।
উপসর্গ সাধারণ সর্দি-কাশির মতো হলেও গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে।
উপসর্গ ও সংক্রমণ
এইচএমপিভি সাধারণত কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া হতে পারে। ভাইরাসটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ফোঁটা, ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং দূষিত পৃষ্ঠ স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।
ভারতে এইচএমপিভি পরিস্থিতি
ভারতে এখনও পর্যন্ত এইচএমপিভি সংক্রমণের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে বেঙ্গালুরুর ঘটনা নজিরবিহীন হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এইচএমপিভি-র জন্য নির্দিষ্ট কোনও অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি: পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং হাইড্রেশন।
জ্বর ও ব্যথার জন্য ওষুধ।
গুরুতর ক্ষেত্রে অক্সিজেন থেরাপি বা হাসপাতালে ভর্তি।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: কাশি বা হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখা।
ঘন ঘন হাত ধোয়া।
অসুস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানো।
জনাকীর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহার।
সরকারি উদ্যোগ
সরকারি নির্দেশিকায় হাসপাতালগুলোকে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা (ILI) এবং গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (SARI) রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
কর্ণাটকের স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকায় জানিয়েছে, এইচ এমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সরকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। বেঙ্গালুরুর শিশুর এইচএমপিভি শনাক্ত হওয়ার ঘটনাটি স্বাস্থ্যখাতে একটি সতর্ক সংকেত হিসাবে কাজ করছে। চিকিৎসা ও প্রতিরোধের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।