
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। আফগানিস্তানে তালিবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাধিক হামলা চলেছে। কখনও পাকিস্তান সেনার উপর হামলা চালিয়েছে আফগানিস্তান। কিন্তু সম্প্রতি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। পাক-আফগান সীমান্তে রবিবার রাতভর সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৩ জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ২০০র বেশি তালিবানির মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা কিন্তু বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। দেখা যাচ্ছে, ভারত হাজার বছর আগের সেই চাণক্যের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নীতিতেই এগোচ্ছে। যার নির্যাস, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষ চালাকালীনই ভারত সফরে এলেন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। যে তালিবান সরকারকে ভারত স্বীকৃতি দেয়নি একদা, এমনকী এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেয়নি, সেই তালিবান সরকারের সঙ্গে ভারতের গাঢ়় বন্ধুত্বে চাণক্য নীতিই মনে করাচ্ছে।
আরও পড়ুন: চাণক্যের ৩ গোপন নীতি, বদলাতে পারে আপনার ভাগ্য
চাণক্যের সেই মণ্ডল তত্ত্ব
চাণক্যর অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী, আধুনিক সময়ে ভারতের বিদেশনীতি, বিশেষ করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে,বাস্তববাদী রাজনীতির এক ক্লাসিক উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এখানে মূল ভিত্তি হল চাণক্যের মণ্ডল তত্ত্ব (Mandala Theory) ও ষড়গুণনীতি (Shadgunya Policy)। মণ্ডল তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি দেশের সরাসরি প্রতিবেশী রাষ্ট্রই তার সম্ভাব্য শত্রু, আর সেই প্রতিবেশীর প্রতিবেশী দেশই স্বাভাবিকভাবে তার মিত্র। অর্থাৎ, ভারতের দৃষ্টিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সব সময়ই সতর্ক ও কৌশলগত হবে। আর আফগানিস্তান বা ইরানের মতো দেশকে ভারত কূটনৈতিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ রাখার চেষ্টা করবে, যাতে আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় থাকে। এই পদক্ষেপ চাণক্যের বাস্তববাদী রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে মিলছে হুবহু।
আরও পড়ুন: এই ৭ জনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে শান্তি ও সাফল্য আসে
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: একে অপরের শত্রু দেশ
পাকিস্তান যেমন ভারতের শত্রু, তেমনই পাকিস্তান আবার আফগানিস্তানেরও শত্রু। চাণক্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী, 'অরি' অর্থাত্ শত্রু। চাণক্য নীতি বলছে, যখন তোমার সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী শত্রু হবে, তখন প্রতিবেশীর প্রতিবেশীর সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখো। তাহলেই প্রতিবেশীকে চাপে রাখতে পারবে।
আরও পড়ুন: এই গুণ থাকলে লোকে বোকা বলে, বদলাতে বলছেন আচার্য চাণক্য
ভারত ও আফগানিস্তান: প্রতিবেশীর প্রতিবেশী
চাণক্যের মণ্ডল নীতি অনুযায়ী, আফগানিস্তান পাকিস্তানের নীতিগত শত্রু। যার ফলে আফগানিস্তান ভারতের স্বাভাবিক ভাবেই মিত্র। আবার ঐতিহাসিক ভাবেও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের যোগ নিবিড়। মহাভারতেও সেই উল্লেখ রয়েছে। তালিবানরা যখন থেকে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে, এই ঘটনাকে আধুনিক চাণক্য স্টাইলও বলা যায়। তালিবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি না দিয়েও কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে দিল্লি। এই যোগাযোগ কিন্তু ভারের বাস্তবমুখী ও স্বার্থের সঙ্গে জড়িত।
ভারত-আফগানিস্তান দোস্তি ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব
ভারত কিন্তু শুধুমাত্র পাকিস্তানকে চাপে রাখতেই কাবুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছে না। বরং ভারত এর সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যত্ দেখতে পাচ্ছে। এই যে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিয়েও তালিবান সরকারের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক রেখে চলেছে ভারত, একে চাণক্যের 'দ্বিধিভব' (দ্বিমুখী নীতি) নীতি বলা হয়। বস্তুত, চাণক্যের যে ষড়গুণ নীতি, সেটাই প্রয়োগ করছে ভারত।
চাণক্যের ষড়গুণ নীতিতে কী কী বলা বয়েছে?
১. সন্ধি: চাণক্যের এই নীতি অনুযায়ী, প্রথমে নানা শান্তি চুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত তৈরি করো।
২. বিগ্রহ: এটি প্রকাশ্য সামরিক কার্যক্রম বা অন্যান্য ধরনের সংঘর্ষের মধ্যেও ঘটতে পারে।
৩. আসন (নিরপেক্ষতা): এমন সংঘর্ষে নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া যা সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
৪. যান (যাত্রা বা সামরিক প্রস্তুতি): সতর্কতা ও প্রস্তুতির সঙ্কেত দেখানোর জন্য সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখা।
৫. সংস্রয় (মিত্রতা বা সংঘবদ্ধতা): হুমকির মোকাবিলায় অন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তোলা।
৬. দ্বৈধিভাব (দ্বৈত নীতি): এক পক্ষের সঙ্গে শান্তি বজায় রেখে অন্যের সঙ্গে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা, যা জটিল আঞ্চলিক পরিস্থিতি পরিচালনা করতে সাহায্য করে।