Manmohan Singh: বামেদের বাধা সত্ত্বেও পরমাণু চুক্তিতে অনড় ছিলেন মনমোহন,আজও সুফল পাচ্ছে ভারত

বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং।সন্ধ্যায় অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে AIIMS-এ ভর্তি করা হয়। মনমোহন সিং দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। আধুনিক ভারতের অর্থনীতির প্রবর্তক মনে করা হয় মনমোহন সিংকে।

Advertisement
বামেদের বাধা সত্ত্বেও পরমাণু চুক্তিতে অনড় ছিলেন মনমোহন,আজও সুফল পাচ্ছে ভারততৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে ড. মনমোহন সিং।
হাইলাইটস
  • বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং।
  • সন্ধ্যায় অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে AIIMS-এ ভর্তি করা হয়।
  • মনমোহন সিং দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। সন্ধ্যায় অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে AIIMS-এ ভর্তি করা হয়। মনমোহন সিং দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। দেশের অর্থনীতিতে তাঁর অবদান নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিরও এমন একটি কাহিনী আছে, যা অনেকেরই অজানা।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও-এর মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। সেই সময় রাজনৈতিক দলগুলির তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অসামরিক পারমাণবিক চুক্তির আলোচনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মনমোহন সিং যখন ১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ভারত একটি গুরুতর ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কম ছিল। এতটাই কম যে, তাই দিয়ে আর মাত্র দুই সপ্তাহের আমদানি চলত। এমন সময় মনমোহন সিং লাইসেন্স রাজ বাতিল করেন এবং ভারতের অর্থনীতিকে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের (FDI) জন্য খুলে দেন। ওপেন ইকোনমির দেশ হয়ে ওঠে ভারত। বাকিটা ইতিহাস।

ভারত-মার্কিন অসামরিক পারমাণবিক চুক্তি 
মনমোহন সিং ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শান্ত, স্থিতধি, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ- মনমোহন সিং দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলির কঠোর বিরোধিতার মুখেও, ভারত-মার্কিন অসামরিক পারমাণবিক চুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

সরকার চাপে পড়েছিল
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের সহায়তায় ডক্টর মনমোহন সিং কয়েকটি দলকে পারমাণবিক চুক্তির বিরোধিতা বন্ধ করতে রাজি করাতে সফল হন। তবে বামপন্থী দলগুলি এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে এবং সরকার থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। সমাজবাদী পার্টি আগে বামফ্রন্টকে সমর্থন করলেও পরে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। 

মনমোহন সিং এবং তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ ১৮ জুলাই, ২০০৫-এ চুক্তির কাঠামোর উপর একটি যৌথ ঘোষণা করেছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৮ সালের অক্টোবরে এই চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। এটি ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য বলা যেতে পাারে। এই পারমাণবিক চুক্তির কারণেই ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়।

এর ফলে যা হয়েছিল:

Advertisement

১. অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা: এই চুক্তির ফলে ভারত অপ্রসারণ চুক্তি (Non-Proliferation Treaty)-র স্বাক্ষরকারী না হয়েও অসামরিক উদ্দেশ্যে মার্কিন পারমাণবিক প্রযুক্তি এবং জ্বালানি অ্যাক্সেস করার অনুমতি পায়।
২. পারমাণবিক প্রযুক্তির পৃথকীকরণ: ভারত তার অসামরিক এবং সামরিক পারমাণবিক উদ্যোগকে আলাদা করে তুলে ধরে। এর ফলে অসামরিক পারমাণবিক কার্যকলাপে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) সুরক্ষা লাভ করে।
৩. স্ট্যাটেজিক পার্টনারশিপ: এই চুক্তির ফলে মার্কিন-ভারত সম্পর্ককে আরও গভীর হয়। অর্থনৈতিক ও শক্তি সহযোগিতার পথ প্রশস্ত হয়েছে।

২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও মনমোহন সিং দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছিলেন। আর সেই কারণেই ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আবারও ইউপিএ সরকার এসেছিল।

সঞ্জয় বারু, তাঁর বই, 'দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার: দ্য মেকিং অ্যান্ড আনমেকিং অফ মনমোহন সিং'(২০১৫) -তে লিখেছেন, 'পরমাণু চুক্তিতে তিনি যে অবস্থান নিয়েছিলেন তা জনসাধারণের মনে সোনিয়া গান্ধীর আনুগত্যের স্মৃতি মুছে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মনমোহন সিং-ই রাজা হলেন।' সঞ্জয় বারু চুক্তিটিকে 'সিংয়ের মুকুট' বলে বর্ণনা করেছেন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ২০০৬টি আসন জিতেছিল।

মনমোহন সিংয়ের আমলে এই পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত হয়েছিল
মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই বিশ্বের বৃহত্তম কর্মসংস্থান প্রকল্প, MNREGA এবং তথ্যের অধিকার (RTI) আইন কার্যকর হয়েছিল। এগুলি যে আজ পুরোদমে প্রাসঙ্গিক, তা বলাই বাহুল্য।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে মনমোহন সিংয়ের বিবৃতি
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অফিস ছাড়ার কয়েক মাস আগে বলেছিলেন, 'আমি এটা মানতে নারাজ যে আমি একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রী। আমার বিশ্বাস, ইতিহাস আমার প্রতি সমসাময়িক সংবাদমাধ্যম বা সংসদে বিরোধী দলগুলির চেয়ে বেশি দয়াবান হবে। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার বিবেচনা করেই আমি আমার সাধ্যমত কাজ করেছি।'

POST A COMMENT
Advertisement