আইএএস-আইপিএসদের ছেলেমেয়েরা কতজন সরকারি স্কুলে পড়ে ?
আইএএস-আইপিএসদের ছেলেমেয়েরা কতজন সরকারি স্কুলে পড়ে ? এমনই প্রশ্ন তুলে বিড়ম্বনায় ফেলে দিল বিহার হাইকোর্ট। বিহার সরকারকে ১৬ অগাস্ট এর মধ্যেই জবাব হাইকোর্টে জমা দিতে হবে।
প্রায় ৪২০ জন আইএএস-আইপিএস
রাজ্যের যে সমস্ত আইএএস-আইপিএস হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে কতজন সরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ান? তার হিসেব জমা দিতে বলা হয়েছে। এই সময়ে ২০৯ জন আইএএস এবং ২১৯ জন আইপিএস কর্মরত রয়েছেন।
জেলাশাসকদের পাঠানো হয়েছে নির্দেশ
পটনা হাইকোর্টের নির্দেশ-এর পর এখন শিক্ষা বিভাগের প্রধান সচিব সঞ্জয় কুমার ৩৮ জেলার ডিএম এবং এসপি কে চিঠি লিখেছেন। ৪ অগাস্ট এর মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তাঁদের জেলায় যাঁরা কর্মরত রয়েছেন, সবার কাছে থেকে তথ্য় সংগ্রহ করে রিপোর্ট তারা মুখ্য সচিবের কাছে পাঠাবেন। সেখান থেকে ১৬ অগাস্ট এর মধ্যে হাইকোর্টে জমা করতে হবে। সেই হলফনামা যাঁরা টিয়ার ওয়ান আর টিয়ার টু স্তরের আইএএস-আইপিএস অফিসার মজুত রয়েছে। তাদের এই হিসেব জমা দিতে হবে।
৫৮৫ গেস্ট টিচার বরখাস্ত মামলার শুনানি
১৩ জুলাই পটনা হাইকোর্টে জাস্টিস অনিল উপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিহার সরকারকে এই নির্দেশ জারি করে তথ্য চেয়েছে। প্রকৃত বিষয়টি হল, জাস্টিস উপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই মামলাটি আসলে, বিহার রাজ্যে ৫৮৫ শিক্ষককে ২০১৮তে রাজ্য সরকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। তাদের একটি দায়ের করা পিটিশনে ভিত্তিতে শুনানি চলছে। তারই ভিত্তিতে এই নির্দেশ এবং হলফনামা জমা করতে বলা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের দাবি
অভিযোগকারী আইনজীবী শমা সিনহা বলেন, ২০১৮তে বিহার সরকার, সরকারি স্কুলগুলিতে বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য ৪ হাজার ২০০ অতিথি শিক্ষক বা গেস্ট টিটার নিয়োগ করেছেন। যখন টিচারদের নিয়োগ চলছিল, সেই সময়ে ৫০০ গেস্ট টিচার এর নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। তার পিছনের কারণ দেখানো হয়েছিল, তাঁদের নির্ধারিত তারিখের পর নিয়োগ করা হয়েছে।
বাচ্চাদের পড়াশোনার কী হবে ?
এই পুরো বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করে যার শুনানি চলছিল, তার মধ্যে প্রশ্ন-উত্তরের মাঝে হাইকোর্ট জানিয়েছে, গেস্ট টিচারদের নিয়োগ থেকে বাতিল করার বিষয়টি আলাদা মামলার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু রাজ্য সরকার ওই সময় কেন চিন্তাভাবনা করল না, এদের সরিয়ে দেওয়া হলে বাচ্চাদের পড়াশোনার কী হবে?
হাজারের উপর পদস্থ আধিকারিক
এই মামলার শুনানির সময় বিচারক বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারি আধিকারিকদের বাচ্চারা সরকারি স্কুলে পড়বে না, ততক্ষণ পর্যন্ত বিহারের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনও পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসবে না। জানা গিয়েছে, বিহারে এই মুহূর্তে ২০৯ জন আইএএস, ২১৯ জন আইপিএস অফিসার এর সঙ্গে সব মিলিয়ে হাজারের উপরে ক্লাস ওয়ান ও ক্লাস টু অফিসার রয়েছে।
রাজ্যের শিক্ষার অবনতিতে আধিকারিকরা দায়ী
এই পুরো মামলা নিয়ে ক্ষমতাসীন জনতা দল ইউনাইটেডের বিধায়ক ডক্টর সঞ্জীব কুমার আজতককে বলেছেন, সরকারি স্কুলের দুর্দশার জন্য উঁচুস্তরের পদস্থ আধিকারিকদের বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে না পড়ানো একটা অন্যতম কারণ, তাঁদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করা উচিত। জনতা দল নির্বাচন বিধায়ক জানান যত আইএএস আইপিএস অফিসার রয়েছেন তারা যদি নিজেদের বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে পড়াবেন, তাহলে সরকারি স্কুলগুলিও ভালো ফল করবে এবং উন্নতি হবে। তাতে মনোযোগ বাড়বে। তিনি বলেন, আমরা আইন তৈরি করি। কিন্তু আইনের পালন করতে সাহায্য করেন অফিসাররা। শিক্ষাক্ষেত্রে যদি কোন উন্নতিতে অন্তরায় তৈরি হয় তাহলে তার জন্য আধিকারিকরা দায়ী। সরকারি আধিকারিকরা যদি চিকিৎসার জন্য নিজেদের আধিকারিকদের ও পরিবারের লোকজনকে সরকারি হাসপাতালে সরকারি স্কুলে নিয়ে যায়, তাহলে সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব।
রাজ্যই দায়ী দাবি বিরোধী দলের
এ বিষয়ে আরজেডি বিধায়ক চেতন আনন্দ রাজ্য সরকারের দিকেই অভিযোগ জানিয়ে জানান, যদি রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা সরকারি স্কুলে নিজেদের বাচ্চাদের পাঠাচ্ছেন না, তাহলে তা কেন পাঠাচ্ছেন না এটা ভাবতে হবে। এর পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে। কোনও আধিকারিক নিজেদের বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে পড়াতে চান না। কারণ সবাই জানেন সরকারি স্কুলের কি অবস্থা। হিসাব বলছে বিহারে মোট ৭২ হাজার ৬৬৩ সরকারি স্কুল আছে। যার মধ্যে ৪২ হাজার ৫৬৭ প্রাথমিক স্কুল, ২৫ হাজার ৫৮৭ জন উচ্চ প্রাথমিক, পাশাপাশি ২ হাজার ২৮৬টি মাধ্যমিক এবং ২ হাজার ২১৭ টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল আছে।