সদা হাস্যমুখ। অদ্ভূত সারল্য। পরনে যৎসামান্য পোশাক। অথচ তিনি বলে চলেছেন, বেদবেদান্তের কথা। কুম্ভ মেলার এই 'আইআইটি বাবা' ভাইরাল নেট মাধ্যমে। আইআইটি মুম্বই থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি। নিশ্চিত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছেড়ে তিনি আজ সংসারত্যাগী। প্রয়াগরাজের সঙ্গমের তীরে দেখা মিলল তাঁর।
আইআইটি স্নাতক। কোটি কোটি টাকার চাকরির প্যাকেজ। সেই সবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন হরিয়ানার বাসিন্দা অভয়। সাধু হওয়ার পর তাঁর নাম হয়েছে মাসানি গোরখ। কিন্তু কেন বৈভবের জীবন ছেড়ে পথের ধুলো মেখে ঘুরছেন? টিভি সাংবাদিকের প্রশ্নে শিশুর মতো হেসে উঠলেন সন্ন্যাসী। বললেন,'এটাই সেরা জীবন। জ্ঞানের পিছনে দৌড়তে থাকো। কোথায় আর যাবেন... এখানেই আসতে হবে'।
চিন্তামুক্ত হয়ে অনাবিল হাসিই তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য। সন্ন্যাসী বলে চলেন,'যে কোনও সময় এই দুনিয়া থেকে আমার বিদায় ঘটতে পারে। আমি হাসতে হাসতে মরে যাব... যদি না হাসতে পারি তাহলে হতে পারে কোনও কাজে ব্যস্ত থাকব। আমাকে ঈশ্বরকে বলতেই হবে, একটু অপেক্ষা করুন। সময়কে থামান, মৃত্যু থামান... শান্ত থাকতেও পারি। তবে হাসতে হবে এমন কোনও কথা নেই। কিন্তু হাসি আনন্দের মুহূর্ত'।
আপনার আসল নাম কী? আবারও হাসি সন্ন্যাসীর। বললেন,'কোনটা নাম? আমার অনেক নাম আছে, মাসানি গোরখ, বটুক ভৈরব, রাঘব, মাধব, সর্বেশ্বরী, জগদীশ্বরী, জগদীশ'।
আইআইটি-তে পড়াশুনো প্রসঙ্গে তিনি বলেন,'আমি খুব ছোট শহর ঝাজ্জরের থেকে এসেছি। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আমি আইআইটির নামও শুনিনি। তারপর স্কুলে কোচিং সম্পর্কে জানতে পারি, এক বছর পড়াশোনা ছেড়ে দিল্লিতে আসি। আইআইটি-তে সুযোগ পেলাম। আসতে মাথাটা ভালো'।
JEE প্রবেশিকা পরীক্ষায় সারা ভারতে ৭৩১ তম স্থান অর্জন করেছিলেন অভয় সিং। অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন,'বড় জায়গায় পড়লে বাড়ির লোক ছাড়বেন, এটা ভেবেই মহাকাশ নিয়ে পড়াশুনো করি। ভেবেছিলাম বেশ মজার হবে। চাকরির কথা ভাবিনি'।
ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পাওয়ার পর মাস্টার ইন ডিজাইন (এমডিএস) পড়েন অভয় সিং। পদার্থবিদ্যার শিক্ষকতাও করাতেন। সেটা ২০১২-১৪ সালের কথা। অভয় বলেন,'আইআইটি-র পর, আমার একটা প্রশ্ন ছিল যে এখন জীবনে আমার কী করা উচিত? এর উত্তর খুঁজতে আমি দর্শনশাস্ত্র পড়ছিলাম, শিক্ষকের আমার অনেক তর্ক-বিতর্ক হত। বলতাম, স্যার বাস্তবে কী করতে পারি সেটা বলুন। কে কী বলেছে, সেটা বিবেচ্য নয়'।