ভারতে বাংলাদেশি রোগীশরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু ঘিরে বাংলাদেশ জ্বলছে, হিন্দুদের গণহত্যা চলছে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একেবারে তলানিতে, এহেন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে চিকিত্সার জন্য আসা রোগীদের কী হবে? বিনা চিকিত্সায় ছেড়ে দেওয়া হবে? কারণ, ইতিমধ্যেই দিল্লি, আগরতলা ও শিলিগুড়িতে ভিসা অফিস বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। একাধিক বেসরকারি সংস্থা থেকেও ভিসা মিলছে না।
ভারতে চিকিত্সার জন্য আসা রোগীরা চরম বিপাকে
অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা পাওয়াও মুশকিল হয়ে গিয়েছে। ভারত সাময়িক ভাবে স্থগিত করে দিয়েছে ভিসা সার্ভিস। যার নির্যাস, বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিত্সার জন্য আসা রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। ভারত-বাংলাদেশ চিকিত্সা পরিষেবার ক্ষেত্র বেশ বড়। বহু বাংলাদেশি উন্নত চিকিত্সার জন্য ভারতে, বিশেষ করে কলকাতায় আসেন। কলকাতার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।
ভারতে গত ৪ বছরে মেডিক্যাল ট্যুরিজম বেড়েছে
সরকারি তথ্য বলছে, ভারতে গত ৪ বছরে মেডিক্যাল ট্যুরিজম বেড়েছে। আর এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান বাংলাদেশেরই। বিদেশ থেকে যত মানুষ ভারতে চিকিত্সা করাতে এসেছেন, তাঁদের বড় অংশই বাংলাদেশি। ২০২০ সালে ভারতে ১ লক্ষ ৮২ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক চিকিত্সা করাতে এসেছিলেন। এর মধ্যে ৯৯ হাজার ১৫৫ জনই বাংলাদেশি। ২০২৪ সালে মেডিক্যাল ট্যুরিস্ট বেড়ে হয়েছিল ৬ লক্ষ ৪৪ হাজার। তার মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৮২ হাজার ৩৩৬।
বাংলাদেশ ছাড়া ভারতে চিকিত্সার জন্য আসা উল্লেখযোগ্য দেশগুলি হল ইরাক, ওমান ও উজবেকিস্তান। তবে বাংলাদেশিদের ধারেকাছেও নেই। ভারতে সাধ্যের মধ্যে উন্নত চিকিত্সার জন্য বহু বছর ধরেই বাংলাদেশের নাগরিকরা আসেন।
প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য ০.৫৩ জন ডাক্তার
২০১৮ সালের একটি সার্ভেতে বাংলাদেশের মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ডেটায় দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশে ১৬.২৭ কোটি মানুষের জন্য রয়েছেন মাত্র ৫৪ হাজার ১৬৭ জন ডাক্তার। অর্থাত্ প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য ০.৫৩ জন ডাক্তার। পরিস্থিতি শোচনীয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে একজন ডাক্তার দেখাতে মানুষের গড়ে প্রায় ৯০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়, অথচ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সময় থাকে মাত্র এক মিনিটের মতো। ঢাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছেও গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় পাওয়া যায় না। COVID19 মহামারির সময় এবং বারবার ডেঙ্গি সংক্রমণ বাড়ার ফলে এই সমস্যাগুলি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
এছাড়াও বাংলাদেশে চিকিত্সাকর্মীর সংখ্যাও মারাত্মক কম। নার্স, প্যাথোলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, টেকনিক্যাল স্টাফের সংখ্যা এতটাই কম যে, রোগীদের বেশির ভাগই বিনা চিকিত্সায় দিন কাটে। ডেটা বলছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ৭০ শতাংশ হেল্থ সেন্টারে ঠিক মতো যন্ত্র সরঞ্জাম নেই, জরুরি পরিষেবা নেই, মান্ধাতার আমলের চিকিত্সা ব্যবস্থা। তার সঙ্গে দুর্নীতি তো রয়েইছে। ২০১৯ সালে দেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের এক তদন্তে দেখা যায়, ১১টি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রায় ৪০ শতাংশ ডাক্তার নিয়মিত কাজে অনুপস্থিত থাকতেন। এত বড় অনিয়মের পরেও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার ভয় প্রায় ছিল না বললেই চলে।