গুরুতর অপরাধের মামলায় গ্রেফতার হলে বা আটক হলে সেই জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দেওয়া হবে। এই মর্মে একটি নতুন বিল আসছে লোকসভায়। প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মন্ত্রীদের উপর কার্যকর হবে এই বিল। অর্থাৎ দোষী সাব্যস্ত হওয়া পর্যন্ত আর অপেক্ষা নয়, গুরুতর অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হলেই অপসারিত হবেন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রস্তাবিত বিলের বিরোধিতায় সরব INDIA জোট। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, গৌরব গগৈরা এই নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। বৈঠক ডাকা হয়েছে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে। প্রয়োজনে টেবিল ভাঙা দেওয়া হবে, ছেঁড়া হবে বিল। বিল পেশের আগে এমন হুঁশিয়ারিই এল বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে।
কী বক্তব্য অভিষেকের?
একটি এক্স পোস্ট করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার বদলে মোদী সরকার শক্তি, ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যস্ত। আমরা এই স্বৈরাচারী মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এই কঠোর সাংবিধানিক সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করছি। জনগণকে স্বস্তি দেওয়া এবং কৃষক, শ্রমিক ও গরিবদের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য কাজ করা এবং সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনেও সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এই সরকার।' তীব্র আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক আরও বলেন, 'নির্বাচন কমিশনকে (EC) অপব্যবহার করে SIR কার্যকর করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। সরকার এখন আরেকটি E অর্থাৎ ED-কে সক্রিয় করেছে, যাতে বিরোধী নেতাদের টার্গেট করা যায় এবং গণতন্ত্রকে চূর্ণবিচূর্ণ করা যায়। রাজ্য সরকারগুলোকে উৎখাত করে জনগণের বিচারকে বিকৃত করাই উদ্দেশ্য এদের। এই সরকার নিজেকে জনগণ-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী, গরিব-বিরোধী, অনগ্রসর শ্রেণি-বিরোধী, সংযুক্ত রাষ্ট্রের কাঠামো-বিরোধী এবং সর্বোপরি ভারত-বিরোধী প্রমাণ করেছে।' সবশেষে অভিষেক বলেন, 'BJP-কে একটি ভোট দেওয়া মানে ভারতের আত্মা বিক্রি করে দেওয়া। এর মানে হল, আমাদের সংবিধানকে বিক্রি করে দেওয়া এবং ভারতকে কিছু অযোগ্য, একগুঁয়ে স্বৈরাচারী শাসককে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে চালাতে দেওয়া। গান্ধী ও আম্বেদকরের আদর্শে গড়া ভারত কখনওই তার আত্মা স্বৈরাচারী শাসক ও ক্ষমতালোভী শাসকদের কাছে সমর্পণ করবে না।'
সরব মহুয়াও
সরকারের এই বিলকে টার্গেট করে মহুয়া এক্স পোস্টে লেখেন, 'বিরোধীদের শঙ্কাই সত্যি হল। সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলছে BJP। মাত্র ২৪০ জন সাংসদ নিয়েই তা করে ফেলছে ওরা। এই নতুন বিলটি যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং বিচারব্যবস্থায় আঘাত করবে। কেন্দ্র এবার ED-CBI কে যেভাবে হোক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। নির্বাচিত বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের ভুয়ো অভিযোগে গ্রেফতার করবে এবং তাদের পদচ্যুত করা হবে। দোষী সাব্যস্ত না হওয়া সত্ত্বেও তাদের আসন খোয়া যাবে।'
বুধবার থেকে এই বিল নিয়ে সংসদ অধিবেশন তোলপাড় হওয়ার আশঙ্কা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এদিন ৩টি বিল পেশ করবেন লোকসভায়। যথাক্রমে, দ্য গভর্নমেন্ট অফ ইউনিয়ন টেরিটরিস (সংশোধিতধ) বিল ২০২৫, দ্য কনস্টিটিউশন (১৩০ তম সংশোধন) বিল ২০২৫ এবং জম্মু-কাশ্মীর রিঅর্গানাইজেশন (সংশোধিত) বিল ২০২৫। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়া টুডেকে এক বিরোধী সাংসদ বলেন, 'আমরা এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট বিল কিছুতেই লোকসভায় পেশ করতে দেব না। প্রয়োজনে টেবিল ভাঙব, বিল ছিঁড়ে দেব।'