সম্প্রতি কিছু দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যে কোভিড সংক্রমণের কেস রিপোর্ট হয়েছে, তার অধিকাংশই মৃদু প্রকৃতির এবং রোগীরা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসাধীন আছেন — এমনটাই জানিয়েছেন সরকারি সূত্র।
শনিবার, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা সভা করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের সচিব, ICMR-এর মহাপরিচালক, DGHS এবং জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (NCDC)-র কর্মকর্তারা।
কেরল, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক থেকে বেশ কিছু নতুন কোভিড কেস রিপোর্ট হয়েছে। তবে সূত্রের দাবি, দেশে IDSP (Integrated Disease Surveillance Programme) এবং ICMR-এর রেসপিরেটরি ভাইরাস নজরদারি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে পশ্চিমভঙ্গে এখনও তেমন নতুন করে কোনও খবর সামনে আসেনি। তবে নজর রাখা হচ্ছে সর্বত্র।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, “এই সংক্রমণগুলির অধিকাংশই মৃদু এবং রোগীরা বাড়িতে থেকেই সেরে উঠছেন।”
সম্প্রতি সিঙ্গাপুর, হংকংসহ কিছু দেশে কোভিড কেস বেড়েছে বলে মিডিয়া রিপোর্টে জানানো হলেও, জাতীয় IHR ফোকাল পয়েন্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সংক্রামক ভ্যারিয়েন্টগুলি পূর্ববর্তী ভ্যারিয়েন্টগুলির তুলনায় বেশি মারাত্মক বা সংক্রমণক্ষম নয়।
সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় আছে এবং একাধিক এজেন্সির মাধ্যমে পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। INSACOG-এর ডেটা অনুযায়ী, ভারতে NB.1.8.1 নামক একটি নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্টের একটি কেস এবং LF.7 ভ্যারিয়েন্টের চারটি কেস সনাক্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত LF.7 ও NB.1.8 ভ্যারিয়েন্ট দুটিকে “Variants Under Monitoring” (VUMs) হিসাবে চিহ্নিত করেছে, এগুলোকে এখনো “Variants of Concern” (VOCs) বা “Variants of Interest” (VOIs) হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। তবে চীন এবং এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এই ভ্যারিয়েন্টগুলিকেই সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
ভারতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে JN.1 ভ্যারিয়েন্ট (৫৩%), এরপর রয়েছে BA.2 (২৬%) এবং অন্যান্য ওমিক্রন সাবলাইনেজ (২০%)। ১৯ মে পর্যন্ত দেশে সক্রিয় কেসের সংখ্যা ছিল ২৫৭। দিল্লিতে ২৩টি নতুন কেস ধরা পড়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে ২৪ ঘণ্টায় ৪টি, তেলেঙ্গানায় ১টি, এবং বেঙ্গালুরুতে এক ৯ মাসের শিশুর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। কেরলে মে মাসে ২৭৩টি কেস রিপোর্ট হয়েছে।
শনিবারও বিভিন্ন রাজ্য থেকে নতুন কেস রিপোর্ট হয়েছে। মহারাষ্ট্রের থানে-তে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এক কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। থানে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মতে, শনিবার শহরে ৮টি নতুন কেস রিপোর্ট হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে দুই পুরুষ করোনা পজিটিভ হয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশে গুজরাট থেকে আসা ৫৭ বছর বয়সী এক পর্যটক এবং AIIMS ঋষিকেশের এক মহিলা ডাক্তার সংক্রমিত হয়েছেন।
দিল্লিতে সাম্প্রতিক ২৩ জন কোভিড রোগীর সবাই মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
দিল্লির সীমানার বাইরের নয়ডায় ৫৫ বছর বয়সী এক মহিলা করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দামোদর রাজনারসিমহ রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। হায়দরাবাদে একটি নতুন কোভিড কেস রিপোর্ট হয়েছে এবং সেই রোগী, যিনি একজন পালমোনোলজিস্ট, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।