রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট জানান, 'যে দেশের এই বিষয়ে রেকর্ড এতটাই শোচনীয়, তাদের মন্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।India Pakistan relations: পাকিস্তানের অভিযোগে পাল্টা কড়া জবাব দিল ভারত। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে পাকিস্তানের দাবি সরাসরি খারিজ করল নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রকের সাফ বক্তব্য, নিজের দেশের 'ভয়াবহ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংখ্যালঘু নিপীড়নের ইতিহাস' আড়াল করতেই ভারতের দিকে আঙুল তুলছে ইসলামাবাদ। কিন্তু তাতে বাস্তব বদলাবে না। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট জানান, 'যে দেশের এই বিষয়ে রেকর্ড এতটাই শোচনীয়, তাদের মন্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। বিভিন্ন ধর্মের সংখ্যালঘুদের উপর পাকিস্তানে যে ভয়ঙ্কর নিপীড়ন চলছে, তা একেবারে সুপ্রতিষ্ঠিত সত্য। শুধু আঙুল তুললেই যে সেই বাস্তব আড়াল করা যাবে না।' কূটনৈতিক ভাষায় হলেও, এই বক্তব্যে পাকিস্তানের অভিযোগকে কার্যত ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে ভারত।
ঘটনার সূত্রপাত পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র তাহির আন্দ্রাবির মন্তব্যে। তিনি আন্তর্জাতিক মহলকে ভারতের দিকে নজর দেওয়ার আর্জি জানিয়ে দাবি করেন, ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বাড়ছে। ‘ক্রিসমাসে ভাঙচুর’ এবং ‘মুসলিমদের উপর হামলা’র দাবি তোলেন। এমনকি ভারতের বিরুদ্ধে ‘লিঞ্চিং’ এ অভিযুক্তদের রক্ষা করার অভিযোগও তোলে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে তাহির আন্দ্রাবি ২০১৫ সালের দাদরি কাণ্ডে মহম্মদ আখলাকের মৃত্যুর প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
কিন্তু সেই অভিযোগেই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, যে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্তরে চলে আসছে, সেই দেশের তরফে ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য ‘নৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ অসংগত’। পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, আহমদিয়া-সহ একাধিক ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর অত্যাচারের অভিযোগ নতুন নয়। জোরপূর্বক ধর্মান্তরণ, উপাসনালয় ভাঙচুর, আইনগত বৈষম্য; এই সবই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রিপোর্টে বারবার উঠে এসেছে।
এই প্রেক্ষিতেই ভারতের বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্যকে নিছক কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া বলে দেখছেন না কূটনীতি বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, এটি আসলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের ‘সিলেক্টিভ নৈতিকতার’ মুখোশ খুলে দেওয়ার চেষ্টা। একদিকে নিজের দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ; এই দ্বিচারিতা আর বরদাস্ত করতে রাজি নয় নয়াদিল্লি।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তান একাধিকবার ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সরব হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই ভারত জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে বিদেশের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। সোমবারের প্রতিক্রিয়াতেও সেই অবস্থানই আরও একবার স্পষ্ট করে দিল বিদেশমন্ত্রক।
সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ভারত-পাক কূটনৈতিক টানাপড়েন নতুন নয়। তবে এ দিনের কড়া বার্তা বুঝিয়ে দিল, শুধু অভিযোগ তুলে দায় এড়ানোর রাজনীতি আর চলবে না। নিজেদের অভ্যাস না বদলালে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরানো যে কঠিন; সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রাখল নয়াদিল্লি।