Bangladesh: একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করল ভারত, বিপাকে ইউনূস সরকার

স্থলপথে বাংলাদেশের বেশ কিছু দ্রব্যের আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত। পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গারমেন্টস ও ফুড প্রোডাক্টও আছে। এবার থেকে শুধুমাত্র মুম্বইয়ের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে এই পণ্যগুলির আমদানি করা যাবে। 

Advertisement
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করল ভারত, বিপাকে ইউনূস সরকার

স্থলপথে বাংলাদেশের বেশ কিছু দ্রব্যের আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত। পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ গারমেন্টস ও ফুড প্রোডাক্টও আছে। এবার থেকে শুধুমাত্র মুম্বইয়ের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে এই পণ্যগুলির আমদানি করা যাবে। 

বড় পদক্ষেপ

ভারত এদেশের স্থলপথে বাংলাদেশের একাধিক পণ্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশকে একটি 'ট্রান্সশিপমেন্টে'র সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। গত ৯ এপ্রিল সেই ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা রদ করে ভারত।

ট্রান্সশিপমেন্ট কী? বাংলাদেশে উৎপাদনের তুলনায় আমদানি-রফতানি পরিকাঠামো দুর্বল। ভৌগলিক অবস্থানও এর জন্য কিছুটা দায়ী। সেই কারণে পাশের দেশ, অর্থাৎ ভারতে স্থলপথে বহু পণ্য পাঠায় বাংলাদেশ। তারপর ভারতের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করে। 

কিন্তু, শনিবার, ১৭মে থেকে বাংলাদেশের একাধিক পণ্যের স্থলপথে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে রেডিমেড পোশাক এবং প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টও আছে। 

কোন কোন পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য মহা-পরিচালক দফতরের (DGFT) বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এখন থেকে বাংলাদেশের তৈরি রেডিমেড পোশাক শুধুমাত্র নব সেবা ও কলকাতা বন্দর দিয়েই আমদানি করা যাবে। যদিও ভারতের মাধ্যমে নেপাল বা ভুটানগামী পণ্যের জন্য় এটি প্রযোজ্য নয়।

নির্দেশিকা।
নির্দেশিকা।

এই নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে যে, প্রসেসড ফুড প্রোডাক্ট, যেমন ফল, ফলের স্বাদযুক্ত কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস, স্ন্যাকস, চিপস, কনফেকশনারি, তুলোর বর্জ্য, প্লাস্টিক পণ্য, রং ও কাঠের তৈরি আসবাবও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে। এই সমস্ত পণ্যই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সীমান্তবর্তী রাজ্যগু দিয়ে পণ্য প্রবেশ নিষিদ্ধ

বাংলাদেশ মূলত অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের চাংরাবান্ধা ও ফুলবাড়ির মতো কোনও সীমান্তের মাধ্যমে স্থলপথে ট্রান্সশিপিং করত। এই সীমান্তে নির্দিষ্ট স্থানে শুল্ক স্টেশন (LCS) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (ICP) থাকত। সেখানে শুল্ক, সিকিউরিটি চেকিং, কাগজপত্রের যাচাই হত। এরপর ভারতের কোনও বন্দর বা এয়ারপোর্টে সেগুলি চলে যেত।

এবার থেকে বেশ কিছু প্রোডাক্টে আর সেই সুবিধা থাকছে না। তবে, মাছ, এলপিজি ও ভোজ্য তেলের মতো কিছু পণ্যে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এগুলি আগের মতোই এসব 'স্থলবন্দরে'র মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবে।

Advertisement

এই সিদ্ধান্তকে ভারতের আমদানি নীতিতে যোগ করা হয়েছে।

চাপ বাড়ছে বাংলাদেশের অন্দরমহলে?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস চিনে গিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি স্থলবেষ্টিত এবং তারা সমুদ্রে পৌঁছাতে বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল। ইউনুস দাবি করেন, বাংলাদেশই এই অঞ্চলে একমাত্র সাগর-মুখী গেটওয়ে। চিন চাইলে তা ব্যবহার করতে পারে বলেও জানান তিনি।

এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়াতেই কি ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিল? তুঙ্গে জল্পনা।

বাংলাদেশের বড় ক্ষতি?

ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে। এখনও পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যত বাণিজ্য হয়, তার ৯৩ শতাংশই স্থলপথের মাধ্যমে। কিন্তু এখন এই পণ্যগুলি শুধুমাত্র কলকাতা ও মহারাষ্ট্রের নব সেবা বন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানি খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের রেডিমেড গার্মেন্ট রফতানি করেছে। যার মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন ডলার শুধুই ভারতের সঙ্গে। তাই ভারত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের বড়সড় ক্ষতি অনিবার্য।

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। সেই সময় আরও একবার পাকিস্তান ও চিনের বন্ধুত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আপাতত ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি চলছে। এরই মধ্যে নতুন এক বিতর্কে জড়িয়েছে বাংলাদেশ। চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের 'ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব' কারও অজানা নয়। পাকিস্তানের মতো, বাংলাদেশেরও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, প্রযুক্তি খাতে চিন কোটি-কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু চিনের সঙ্গে এই বোঝাপড়াই কি বাংলাদেশের 'কাল' হতে চলেছে? ট্রান্সশিপিংয়ের নিষেধাজ্ঞার পর সেই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে।

POST A COMMENT
Advertisement