প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) শীঘ্রই এক্সটেন্ডেড ট্র্যাজেক্টরি - লং ডিউরেশন হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল (ET-LDHCM) পরীক্ষা করতে চলেছে। এই মিসাইলটি প্রজেক্ট বিষ্ণু-র অংশ। এটিকে ভারতের সবচেয়ে উন্নত হাইপারসনিক প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মিসাইলের বিশেষত্ব হল এটি শত্রুদের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। আসুন জেনে নিই ET-LDHCM কী, এর বৈশিষ্ট্য এবং কেন এটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
T-LDHCM কী?
ET-LDHCM অর্থাৎ এক্সটেন্ডেড ট্র্যাজেক্টরি - লং ডিউরেশন হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল হল এমন একটি মিসাইল, যা শব্দের ৫ গুণেরও বেশি গতিতে উড়তে পারে (ম্যাক ৫-এর উপরে)। এই মিসাইলটি হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমনস্ট্রেটর ভেহিকেল (HSTDV) এর উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ২০২০ সালে সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।
পরীক্ষার তারিখ
২০২৪ সালের নভেম্বরে ওড়িশার উপকূলে এর প্রথম সফল পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরবর্তী পরীক্ষা শীঘ্রই হবে।
অবস্থান
ডঃ এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ, ওড়িশা।
উদ্দেশ্য
দীর্ঘ দূরত্ব থেকে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা।
ET-LDHCM এর বৈশিষ্ট
ET-LDHCM মিসাইল তার গতি, পরিসীমা এবং প্রযুক্তির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মিসাইলগুলির মধ্যে একটি। নীচে এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি দেওয়া হল।
উচ্চ গতি: এই মিসাইলটি ম্যাক ৮ (প্রায় ১১,০০০ কিমি/ঘণ্টা) এর চেয়েও বেশি গতিতে উড়তে পারে। অর্থাৎ, এটি ১ সেকেন্ডে ৩ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এত উচ্চ গতির কারণে শত্রু রাডার একে ট্র্যাক করতে অক্ষম।
দীর্ঘ পরিসীমা: এর পরিসীমা দেড় হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। এই মিসাইল দিয়ে সমগ্র পাকিস্তান এবং চিনের একটি বৃহৎ অংশে আঘাত করা যেতে পারে। এটি আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে।
স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন: মিসাইলটিতে একটি স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন রয়েছে, যা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে জ্বালানি পোড়ায়। এটি এটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য হাইপারসনিক গতিতে উড়তে দেয়। ২০২৫ সালে DRDO ১০০০ সেকেন্ডের জন্য স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের একটি সফল স্থল পরীক্ষা চালিয়েছিল।
রাডার এড়াতে সক্ষমতা: এই মিসাইলটি কম উচ্চতায় উড়ে। এটি তার পথ পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে এটি ট্র্যাক করা বা আটকানো কঠিন হয়ে পড়ে। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেশন লেপ এবং তাপ-প্রতিরোধী উপকরণ রয়েছে, যা চরম তাপ (২,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত) সহ্য করে।
বিভিন্ন পেলোড: এই মিসাইলটি পারমাণবিক এবং অ-পারমাণবিক উভয় অস্ত্র বহন করতে পারে। এটি ১০০০-২০০০ কেজি ওজনের পেলোড বহন করতে সক্ষম।
দেশীয় প্রযুক্তি: হায়দ্রাবাদের ডঃ এপিজে আবদুল কালাম মিসাইল কমপ্লেক্সে ডিআরডিও এবং সহযোগী অংশীদাররা এই মিসাইলটি তৈরি করেছে। এটি সম্পূর্ণরূপে মেক ইন ইন্ডিয়ার একটি অংশ।
ET-LDHCM এর কাজ কী?
ET-LDHCM একটি বহুমুখী ক্ষেপণাস্ত্র, যা অনেক ধরনের মিশনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর প্রধান কাজ হল...
শত্রুর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি শত্রুর বাঙ্কার, রাডার স্টেশন, জাহাজ এবং সামরিক ঘাঁটিগুলিকে নির্ভুলভাবে টার্গেট করতে পারে। উচ্চ গতি এবং রাডার এড়িয়ে যাওয়া এটিকে জাহাজ-বিরোধী এবং স্থল-আক্রমণ মিশনের জন্য আদর্শ করে তোলে।
কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধি: এই মিসাইলটি ভারতকে চিন এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে কৌশলগত সুবিধা দেয়। এটি শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা: ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তি ভবিষ্যতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের মতো ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে। গগনযান মিশনের মতো, এটি ভারতের মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করবে।
ET-LDHCM কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই মিসাইলের মাধ্যমে ভারত রাশিয়া, চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো হাইপারসনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন দেশগুলির তালিকায় যোগ দিয়েছে। এর ফলে ভারত পঞ্চম দেশ হিসেবে এই ধরনের মিসাইল তৈরি করেছে। ET-LDHCM সম্পূর্ণরূপে স্বদেশী, যা মেক ইন ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারতের প্রতীক। এটি বিদেশি অস্ত্রের উপর নির্ভরতা কমাবে। এর ১,৫০০ কিমি পাল্লা এবং ১১,০০০ কিমি/ঘণ্টা গতি চিন এবং পাকিস্তানের জন্য একটি বড় হুমকি করে তুলবে। এটি করাচি বা বেজিংয়ের মতো শহরগুলিকে কয়েক মিনিটের মধ্যে টার্গেট করতে পারে। এই মিসাইলের উন্নয়ন হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে বেসামরিক এবং মহাকাশ খাতে স্ক্র্যামজেট এবং হাইপারসনিক বায়ু টানেলের মতো প্রযুক্তি কার্যকর হবে।