
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ, বৃহস্পতিবার দিল্লি পৌঁছচ্ছেন। তাঁর সফরকে ঘিরে অন্যতম বড় খবর, ভারত প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে রাশিয়া থেকে একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত আক্রমণাত্মক সাবমেরিন লিজ নিতে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘ এক দশক ধরে চলা আলোচনার কার্যত অবসান ঘটল এক চুক্তির মধ্য দিয়ে। একথা জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ।
সূত্রের দাবি, গোপন আলোচনায় মূলত খরচের জন্যই বারবার জট সৃষ্টি হয়েছিল। অবশেষে দু’দেশ শর্তাবলী চূড়ান্ত করেছে। ভারতীয় একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি রাশিয়ার একটি শিপইয়ার্ড পরিদর্শন করে সাবমেরিন নির্মাণের অগ্রগতি ঘুরে দেখেছে বলেও জানা গেছে। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করে জানাচ্ছেন, যদিও ভারত দুই বছরের মধ্যে সাবমেরিনটি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে সময়সীমা বাড়তে পারে।
পুতিনের ভারত সফর: প্রতিরক্ষা-জ্বালানি সহযোগিতাই মুখ্য
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ-মাত্রার অভিযান শুরুর পর এই প্রথম পুতিন ভারত সফনে এলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি বাণিজ্য এবং কৌশলগত সমন্বয় বাড়ানোর বিষয়েই মূলত জোর দেওয়া হবে।
সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভারতের নৌবাহিনীর বহরে যোগ দেওয়া এই রাশিয়ান সাবমেরিনটি ১০ বছরের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক লিজ হিসেবে থাকবে। এটি কোনওভাবেই সক্রিয় যুদ্ধ অভিযানে ব্যবহার করা যাবে না। ভারতের লক্ষ্য-নিজস্ব পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নাবিকদের দক্ষতা বাড়ানো।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক সাবমেরিন?
পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনগুলো দীর্ঘক্ষণ জলের নীচে থাকতে পারে। অত্যন্ত নীরবে চলতে সক্ষম। আকারে বড় ও শক্তিশালী। সনাক্ত করা কঠিন। বিশেষ করে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নজরদারি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে এগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। চুক্তির আওতায় রক্ষণাবেক্ষণ ও লজিস্টিক সহায়তাও অন্তর্ভুক্ত। এর আগে ভারত ১০ বছরের জন্য একটি রুশ সাবমেরিন লিজে ব্যবহার করে ২০২১ সালে তা ফেরত দিয়েছে।
বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনী ১৭টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন চালায়। পাশাপাশি দেশের নিজস্ব ডিজাইন করা কৌশলগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী পারমাণবিক সাবমেরিনও রয়েছে। ভারত আরও দেশীয়ভাবে আক্রমণাত্মক পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির কাজ করছে। আগামী বছর তৃতীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিনও নৌবহরে যুক্ত হবে।
বিশ্বমঞ্চে পারমাণবিক সাবমেরিন প্রতিযোগিতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু দেশই পারমাণবিক সাবমেরিন সক্ষমতার দিকে ঝুঁকছে। অস্ট্রেলিয়া UK-US-AUKUS জোটে পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরি করছে। দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় একই প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চিন ও রাশিয়াই পূর্ণমাত্রায় পারমাণবিক সাবমেরিন পরিচালনা করে। মার্কিন শুল্ক চাপ, রাশিয়া-চিন সম্পর্ক ও ভারতের কৌশলগত ভারসাম্য।
চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করলে ভারত তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন আরও জোরদার করে রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে উদ্যোগী হয়। ট্রাম্পের দাবি, মোদী সরকার রাশিয়ার তেলের অন্যতম বড় ক্রেতা হওয়ায় আমেরিকা দ্বিতীয় দফা আমদানি শুল্ক বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। ভারত শুল্কের বোঝা কমানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনাও জোরদার করছে।
ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট দফতর কেউই এখনো পর্যন্ত এই সাবমেরিন চুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। পুতিনের সফরে যা যা রয়েছে। সরকারি নথি অনুযায়ী, উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। মোদীর সঙ্গে ব্যক্তিগত নৈশভোজ। প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি চুক্তি। বাণিজ্য সম্প্রসারণ আলোচনা। ভারতে রাশিয়ার ‘RT’ চ্যানেল চালুর প্রস্তাব। সব মিলিয়ে পুতিনের সফর Indo-Russia সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।