সলমন খানের 'Battle of Galwan' সিনেমা নিয়ে চিনের সমালোচনায় গুরুত্ব দিতে নারাজ নয়াদিল্লি। চিনের আপত্তিকে কার্যত খারিজ করল ভারত। সলমন খানের 'Battle of Galwan' সিনেমা নিয়ে চিনের সমালোচনায় গুরুত্ব দিতে নারাজ নয়াদিল্লি। ভারতের অবস্থান স্পষ্ট; চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃজনশীল স্বাধীনতা রয়েছে। ভারতীয় সিনেমায় ঐতিহাসিক সামরিক ঘটনাকে তুলে ধরাটা নতুন কিছু নয়। সীমান্ত সংঘর্ষ হোক বা যুদ্ধের স্মৃতি; এই বিষয়গুলি নিয়ে ছবি তৈরি করা ভারতে কোনও 'অভূতপূর্ব' ঘটনা নয়।
মঙ্গলবার সরকারি সূত্রে ইন্ডিয়া টুডে টিভিকে জানানো হয়েছে, India-China border conflict নিয়ে সিনেমা এই প্রথম নয়। উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে ১৯৬৪ সালের 'Haqeeqat', যেখানে ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধকে পর্দায় তুলে ধরা হয়েছিল। সাম্প্রতিক কালে '121' ছবিতেও Rezang La-র যুদ্ধকে কেন্দ্র করে গল্প বলা হয়েছে। সূত্রের বক্তব্য, কোন গল্প বলা হবে, তা নির্মাতাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। সেই সৃজনশীল প্রকাশকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া ঠিক নয়।
এই কড়া প্রতিক্রিয়া আসে Global Times-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। সপ্তাহান্তে মুক্তি পাওয়া 'Battle of Galwan'-এর টিজার ঘিরে তীব্র আপত্তি তোলে চিনা সংবাদপত্রটি। তাদের অভিযোগ, ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের Galwan Valley-তে ভারত ও চিনা সেনার মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল, তার ঘটনাপ্রবাহ ছবিতে 'ভুলভাবে' তুলে ধরা হয়েছে। Global Times দাবি করে, ছবির উপস্থাপনা তথাকথিত 'বাস্তব তথ্যের' সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সবচেয়ে বিতর্কিত অংশে, Galwan সংঘর্ষে নিহত ভারতীয় সেনা আধিকারিক Colonel Bikkumalla Santosh Babu-র ভূমিকা নিয়েও কটাক্ষ করা হয়েছে। তাঁকে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে দেখানোকে 'so-called' বলে উল্লেখ করে চিনা প্রতিবেদনে। শুধু তাই নয়, দাবি করা হয়, চিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবির টিজার নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই একে অতিরঞ্জিত ও নাটকীয় বলে কটাক্ষ করেছেন বলে দাবি Global Times-এর।
চিনের সেই পুরনো অবস্থানও ফের সামনে এনেছে ওই প্রতিবেদন। দাবি করা হয়েছে, Line of Actual Control (LAC) অতিক্রম করে প্রথমে ভারতীয় সেনারাই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে। ভারত সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং PLA সেনাদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে; এমন অভিযোগও তোলা হয়। ভারত যেখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রায় ২০ জন সেনার মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছিল, সেখানে চিন প্রথমে কোনও ক্ষয়ক্ষতির কথা মানেনি। অনেক পরে তারা চার জন সেনার মৃত্যুর কথা স্বীকার করে।
Global Times আরও অভিযোগ করেছে, ভারত নাকি সিনেমার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিচ্ছে। তাদের মতে, এটি একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। তবে নয়াদিল্লির পাল্টা বক্তব্য, সিনেমা কোনও সীমান্ত দাবি বদলাতে পারে না, আবার সত্য বলার অধিকারও কেড়ে নিতে পারে না।
পরিচালক Apoorva Lakhia-র এই ছবি আগামী এপ্রিল ২০২৬-এ মুক্তি পাওয়ার কথা। সলমন খানের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন Chitrangada Singh। টিজার প্রকাশের পর থেকেই যে ছবি শুধু বিনোদনের গণ্ডিতে আটকে নেই, বরং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গিয়েছে; তা স্পষ্ট।
প্রশ্ন উঠছেই। সীমান্ত সংঘর্ষের স্মৃতি কি শুধুই কূটনীতির বিষয়? নাকি শিল্প, সাহিত্য ও সিনেমারও নিজস্ব ভাষায় সেই ইতিহাস বলার অধিকার রয়েছে? 'Battle of Galwan' ঘিরে চিন-ভারত টানাপড়েন সেই পুরনো বিতর্ককেই নতুন করে সামনে এনে দিল। শিল্পের স্বাধীনতা বনাম রাষ্ট্রীয় আপত্তি; এই দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত কার জায়গা কোথায়, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহলে।