গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পাঁচ বছর ধরে যে বন্ধুত্বপূর্ণ যাতায়াত প্রায় স্থগিত ছিল, তার অবসান ঘটিয়ে ভারত অবশেষে চিনা নাগরিকদের জন্য পর্যটন ভিসা চালু করার সিদ্ধান্ত নিল। আগামী ২৪ জুলাই ২০২৫ থেকে এই ভিসা প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে বেজিঁং-এ অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস।
কীভাবে আবেদন করা যাবে?
দূতাবাসের তরফে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবো–তে জানানো হয়েছে—
প্রথমে নির্দিষ্ট ওয়েব লিঙ্কে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে হবে।
ফর্মের প্রিন্ট আউট নিয়ে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে।
তারপর বেজিঁং, সাংহাই বা গুয়াংজুর ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে পাসপোর্ট, পূর্ণাঙ্গ ফর্ম ও প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
প্রেক্ষাপট
২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষ–এর পর দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়। ভারত তখন চিনা বিনিয়োগে কড়াকড়ি আনে, শতাধিক চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে এবং পর্যটন ভিসা বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি, কোভিড-১৯ মহামারীও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কঠিন করে তোলে।
পরবর্তীতে, চিন ভারতীয় শিক্ষার্থীদের দেশে প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবাও বন্ধ ছিল।
সম্পর্কের বরফ গলছে
এ বছর জানুয়ারিতে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি-র চিন সফরের পর দুই দেশের মধ্যে ধীরে ধীরে যোগাযোগ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ শুরু হয়। সরাসরি বাণিজ্যিক বিমান পরিষেবা পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তীর্থযাত্রীদের জন্য পশ্চিম তিব্বতের কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রাও পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা হয়।
অর্থবহ পদক্ষেপ
ভারতের এই সিদ্ধান্তকে কূটনৈতিক মহলে স্বাভাবিকীকরণের প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দীর্ঘ বিরতির পর চিনা নাগরিকদের পর্যটন ভিসা পুনরায় চালু করা, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
দূতাবাসের পোস্টে যেমন বলা হয়েছে—
'২০২০ সালের স্থগিতাদেশের পর এই প্রথম, ভারত আবার চিনা নাগরিকদের পর্যটন ভিসা প্রদান শুরু করছে।'
আগামী দিনের সম্ভাবনা
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, শিক্ষা ও পর্যটনের নতুন দিগন্ত খুলবে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সীমান্ত সংক্রান্ত মতভেদ পুরোপুরি মেটানো না-যাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া কতটা গতি পায়, সেটাই দেখার। ২৪ জুলাই থেকে চিনা নাগরিকরা ভারত ভ্রমণের জন্য পর্যটন ভিসা পাবেন, পাঁচ বছরের বিরতির অবসান ঘটিয়ে এটাই ভারত–চিন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়।