কিংস কলেজ লন্ডনের সহকারী অধ্যাপক ওয়াল্টার সি. ল্যাডভিগ এবং প্রাক্তন সেনাকর্তা রাজেশ পন্ত।ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত। সদ্য অপারেশন সিঁদুর। আধুনিক যুদ্ধ আর শুধু গোলাবারুদেই থেমে নেই। তার ব্যপ্তি বেড়েছে। সে সব নিয়েই আলোচনা হল মুম্বইয়ের ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভে। 'Conventional Wars under the Nuclear Umbrella: The India-Pakistan Conundrum' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিলেন কিংস কলেজ লন্ডনের সহকারী অধ্যাপক ওয়াল্টার সি. ল্যাডভিগ তৃতীয় এবং প্রাক্তন জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কো-অর্ডিনেটর লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজেশ পন্ত।
৩টি ঘটনাক্রম: উরি থেকে অপারেশন সিঁদুর
২০১৬ সালের উরি, ২০১৯ সালের বালাকোটে বিমান হামলা এবং ২০২৫ সালে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোকপাত করা হয় আলোচনায়। চিরাচরিত যুদ্ধ, পরমাণু হামলার হুমকি এবং হাইব্রিড যুদ্ধের মিশ্রণ দেখা গিয়েছিল তিনটি ঘটনায়। রাজেশ পন্ত বলেন,'এই ঘটনাগুলি দেখিয়ে দিয়েছে, পরমাণু বোমার ছায়ায় ছোট ছোট লড়াইয়ে জড়াচ্ছে দুই দেশ।
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার চক্র: পরমাণু হামলা কেন কঠিন?
ওয়াল্টার ল্যাডভিগ বলেন, 'প্রতিটি ক্রিয়ারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। পাকিস্তান কিছু করলে তার জবাব দেবে ভারত। কিন্তু পরমাণু হাতিয়ার ব্যবহার করা খুবই কঠিন। অতএব, ছোট ছোট যুদ্ধ চলতেই থাকে। পাকিস্তানের রণনীতি হতে পারে কৌশলগতভাবে পরমাণু অস্ত্রেরর ব্যবহার।
পন্ত দুটি মতের পক্ষে। পরমাণু হাতিয়ারের ব্যবহার হলেও তা ছোট এবং সীমিত হবে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াল্টার যোগ করেছেন, যুদ্ধের অভিঘাতের পরিসর সীমাবদ্ধ। কিন্তু পরমাণু হাতিয়ারের ক্ষেত্রে তা নয়। ছোট পারমাণু হাতিয়ারও তাই বড়সড় অভিঘাত তৈরি করতে সক্ষম।
হাইব্রিড যুদ্ধ: পাকিস্তানের মূল কৌশল
হাইব্রিড যুদ্ধের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন পন্ত। এটি প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষ যুদ্ধের সংমিশ্রণ। যেমন ভৌগোলিক আক্রমণ, সাইবার আক্রমণ, পেজার আক্রমণ (পেজার ডিভাইসে আক্রমণ) এবং অপারেশনাল প্রযুক্তির উপর আক্রমণ। হাইব্রিড যুদ্ধ অনেক বড়। পাকিস্তান চিরাচরিত যুদ্ধে লড়তে পারবে না। তাই 'ছায়া অভিনেতা'র মাধ্যমে হাইব্রিড যুদ্ধের আশ্রয় নেবে।
পাকিস্তানের বদল নিয়ে আলোচনা করেছেন ওয়াল্টার। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে ধ্বংস করছে তারা। অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কিন্তু সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর পাকিস্তান কিছুই করতে পারেনি। অপারেশন সিঁদুকে ভারতের আক্রমণ পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছিল। পাকিস্তান আঘাত সহ্য করেছে। মুখরক্ষা করতে পারেনি।
তথ্যযুদ্ধ: ভুয়ো খবরের জাল
ওয়াল্টার বলেন, 'জনগণের মধ্যে ভুল তথ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যা প্রভাবিত করছে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের। অপারেশন সিঁদুরের পর নিজেদের জয় দাবি করেছে পাকিস্তান। লন্ডনে থাকাকালীন ফরাসি এবং চিনা হাতিয়ার সম্পর্কে নানা মিথ্যা কাহিনি শুনেছিলেন ওয়াল্টার।
রাজেশ ব্যাখ্যা করেন, তথ্য প্রচারের একাধিক স্তর রয়েছে - মন্ত্রক, সামরিক ব্যবস্থা এবং সাইবারস্পেস। চিনে সাইবারস্পেস শি জিনপিংয়ের অধীনে। নূর খান বিমানঘাঁটিতে লোকসানের কথাও উল্লেখ করেন। আমেরিকা কেন কৃতিত্ব চায়? এর মধ্যে অবশ্যই কিছু যোগসূত্র থাকতে হবে। চিনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তাই ভারতের খুশি হওয়া উচিত।
অপারেশন সিঁদুর কে জিতেছে?
ওয়াল্টার স্পষ্ট জানান, ভারত লক্ষ্যে সফল। ১১টি পাকিস্তানি বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে। এতে সামরিক লক্ষ্য পূরণ। বিমানঘাঁটি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভারত নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়েছে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসিম মুনির বিপাকে পড়েছেন।