ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলতে থাকা বাণিজ্যিক টানাপড়েন নতুন মাত্রা পেল। ভারত সরকারের তরফ থেকে শুক্রবার রাতে ঘোষণা করা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাট ও সংশ্লিষ্ট ফাইবারজাত পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে দেশের সমস্ত স্থলপথ ও বন্দর রুটে। একমাত্র ব্যতিক্রম হিসাবে অনুমতি থাকবে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রের নহাভা শেভা বন্দরে।
কেন নেওয়া হল এই সিদ্ধান্ত?
ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের (DGFT) নির্দেশিকা অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের পিছনে প্রধান কারণ দেশীয় পাট শিল্পের উপর পড়া নেতিবাচক প্রভাব এবং বাংলাদেশের ‘ডাম্পিং’ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা ভর্তুকিযুক্ত এবং কম দামে পাটজাত পণ্য ভারতে রপ্তানি করছে, যার ফলে ভারতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাট শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কি কি নিষিদ্ধ? কোথা থেকে?
এই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, নহাভা শেভা বন্দর ছাড়া দেশের অন্য কোনও বন্দর বা স্থলসীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি পাটজাত পণ্য আমদানি করা যাবে না। অর্থাৎ, দক্ষিণ এশিয়ার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (SAFTA) অনুযায়ী বাংলাদেশ যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছিল, তা কার্যত খর্ব করা হল এই পদক্ষেপের মাধ্যমে।
এর আগেও ছিল সতর্কবার্তা
উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে। সেই সুবিধার অধীনে বাংলাদেশ ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারত।
ভারতীয় প্রতিক্রিয়া: ‘নিষেধ নয়, বার্তা’
GTRI-এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাংলাদেশ অনেক ভারতীয় পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। আমরা কোনও কিছু সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করিনি, বরং একটি বার্তা দিয়েছি। আমরা বলেছি স্থলপথে আসা যাবে না, সমুদ্রপথ ব্যবহার করুন।”
আগামী দিনে কী করতে পারে বাংলাদেশ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের পাটশিল্প ও রপ্তানি বাজারে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এখনও সমুদ্রপথ উন্মুক্ত রাখার কারণে কিছুটা ব্যবসা চলবে। বাংলাদেশের তরফে এখন দেখা যাক তারা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ভারসাম্য ফেরানোর চেষ্টা করে কি না।