২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের আগে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর টহল চুক্তিতে ফিরে আসার জন্য চিনের সঙ্গে নতুন করে একটি চুক্তি হয়েছে। ভারত ও চিনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ নিরসনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। চার বছর ধরে চিন ভারতের স্থিতাবস্থা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। তবে সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে চিনকে এই চুক্তিতে সম্মত করা ভারতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
চুক্তির পটভূমি এবং সামরিক গুরুত্ব
১৭টি ওয়ার্কিং মেকানিজম মিটিং এবং ২১টি সামরিক সংলাপের পর ভারত-চিন সীমান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্য অনুযায়ী, এই চুক্তির মাধ্যমে ২০২০ সালের মতো পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার হবে এবং টহল কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। বিশেষ করে ডেপসাং এবং ডেমচোকের মতো মূল ফ্রিকশন এলাকাগুলোতে ভারতীয় সেনাবাহিনী আবার টহল দিতে পারবে।
গোগরা-হট স্প্রিংস, প্যাংগং লেক এবং গালওয়ান উপত্যকার মত এলাকা আগেই মুক্ত করা হয়েছে। তবে, ডেপসাং সমভূমি ও ডেমচোক এখনও দু’দেশের আলোচনার বিষয় হিসেবে রয়েছে। ডেপসাং ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দৌলত বেগ ওল্ডি পোস্টের কাছে অবস্থিত, যা সীমান্তে সেনা ও ট্যাঙ্কের চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা
এই চুক্তির মাধ্যমে চিন-ভারত সীমান্তের ৩৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির আশা করা হচ্ছে। চিন অরুণাচল প্রদেশ সহ ভারতের প্রায় ৯০,০০০ বর্গ কিমি এলাকা দাবি করে আসছে, যেখানে ভারত বলছে যে লাদাখের ৩৮,০০০ বর্গ কিমি জমি আকসাই চিন অঞ্চলের অংশ।
বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি
সীমান্ত চুক্তির ফলে ভারত-চিনের মধ্যে ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভারত চিনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। নতুন চুক্তির মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি শিথিল হতে পারে এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। চিনের টেলিকম হার্ডওয়্যার এবং কাঁচামাল ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়।